শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাজার দর

কমেছে চালের দাম, বেড়েছে সবজি, ছড়াছড়ি ইলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেছে চালের দাম, বেড়েছে সবজি, ছড়াছড়ি ইলিশের

রাজধানীর বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। মানভেদে সব ধরনের চালের দাম এরই মধ্যে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। বাজারজুড়ে সস্তা দামে ইলিশের ছড়াছড়িও লক্ষ্য করা গেছে। তবে সবজির ক্ষেত্রে উল্টো অবস্থা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা কমলেও খুচরা বাজারে কমেছে এক থেকে তিন টাকা। ওএমএসের চালের দাম কমেনি। ১৫ টাকা দরের চাল এখনো বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর ও বারিধারা বাজারের চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় চালের দাম কমতে আরও কয়েক দিন লাগবে। এ ছাড়া দেশের বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় পর চাল আমদানি শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত থেকে চাল আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বলেন, বড় শিল্প গ্রুপগুলো চাল আমদানিতে যুক্ত হওয়ায় দেশের বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। দামও সহনীয় থাকবে।

জানা গেছে, বাজারে চাহিদার কারণে চালের দাম নিয়ে কারসাজি হলেও সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। এ ছাড়া চাল আমদানিতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গ্রিন- গ্রেইন। গত আড়াই মাসে ৩ হাজার টন চাল আমদানি করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য, বাজারে চালের সংকটের কারণে চাল আমদানিতে তারা যুক্ত হয়েছে। বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়ায় চালের দাম কমছে বলে জানান ঢাকার-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম। গতকাল তিনি বলেন, কয়েক দিনে স্বর্ণা নামের সিদ্ধ চাল কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা কমেছে। আতপ চালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি দুই থেকে আড়াই টাকা। এদিকে গত মঙ্গলবার সারা দেশের চালকল মালিক সমিতি নেতাদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী  তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বৈঠকে চালকলের মালিকরা দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। বৈঠকের পর চালের বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে চালকলের মালিকরা বেশ কিছুদিন চালের সরবরাহ আদেশ নেওয়া প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল যে- দাম অনেক বাড়বে। এ কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে চাল কিনে রাখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল- যা বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ঢাকার বড় চালের বাজার কারওয়ান ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সরাসরি কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাল এনে বিক্রি করেন। ফলে দাম ওঠানামার প্রভাব ওই সব বাজারে আগে পড়েছিল। বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা বলেন, মোটা চালের নতুন দর কেজিপ্রতি ৪৩ টাকা হয়েছে, যা কয়েক দিন আগে ৪৮ টাকা ছিল। মিনিকেট চালের দামও কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে ৫৮-৫৯ টাকায় নেমেছে। বিআর-২৮ চালের দাম কমেছে ২ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা দরে। ঈদুল আজহার পর বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল মিনিকেট ও ভারতীয় মোটা চালের দাম। এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম পাইকারি বাজারে ৬২ টাকায় উঠে যায়। যা খুচরা বাজারে ছিল কেজিপ্রতি ৬৫-৬৬ টাকায়। কারওয়ান বাজারের চালের আড়ত মিলন রাইস এজেন্সির মালিক মিজান রহমান বলেন, মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমেছে। নতুন করে চাল এলে দাম আরও কিছুটা কমবে। কারণ বেনাপোলে দাম আরেকটু বেশি হারে কমেছে। তিনি বলেন, চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ তার কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম ২ টাকা কমিয়ে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অন্যরাও মোটামুটি একই হারে কমিয়েছেন। বেনাপোল বন্দরে মোটা চালের দাম কয়েক দিন আগে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। একই চাল সর্বোচ্চ ৪১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মুঠোফোনে বলেন, দাম কমার দিকে থাকায় ক্রেতারা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।  কারওয়ান বাজারে গতকাল চাল কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, চিকন চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। গত দুই দিনে ২ টাকা কমেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে ১৮ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৭ লাখ ১৮ হাজার টন চাল। রাজধানীর বাজার চিত্র : কারওয়ান ও মিরপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি বেগুন আকারভেদে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫, শসা (দেশি) ৬০ এবং হাইব্রিড ৪০ টাকায়। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। করল্লা কেজিপ্রতি ৬০, ঢেঁড়স ৬০, শিম ২০ টাকা বেড়ে ১২০, ঝিঙা ৬০, পটোল ৫০, পেঁপে ৩০, কচুর লতি ১০ টাকা বেড়ে ৫০, টমেটো ১০০, কাঁচামরিচ ১৩০, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০, মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৭০, গাজর ৭৫, কাঁকরোল ৬০, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ২০, লালশাক ১০ ও লেবুর হালি ২৫, ধনেপাতা আঁটি ১০ থেকে ১৫, আলুর কেজি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা নবী হোসেন বলেন, সবজির দাম বাড়লেও চালের দাম কমছে। এতে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯৬ থেকে ৯৮ টাকায়। পিয়াজ দেশি ৪৫ ও ভারতীয় পিয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রসুন দেশি ৯০ এবং ভারতীয় ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫, দেশি কক মুরগি ১৯০ থেকে ২০০, লেয়ার মুরগি ২৫০ ও দেশি মুরগি আকারভেদে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজার সহনীয় রয়েছে। ইলিশের ছড়াছড়ি রয়েছে বাজারে। এক কেজি ওজনের এক জোড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া চাহিদা বেশি থাকায় রুই মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। সাগরের মাছের সরবরাহ বেড়েছে। মাংসের বাজার আগের সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০০ ও খাসির মাংস ৭০০ টাকায়। এসবের পাশাপাশি লবণের দাম কমেছে। এ দিন মানভেদে প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর