শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই জাহাজ ভর্তি পচা চাল এসেছে থাইল্যান্ড থেকে!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দেশজুড়ে চাল নিয়ে যখন চালবাজি চলছে, তখন এ ইস্যুতে যোগ হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে আসা পচা চালের দুটি জাহাজ। ৩২ হাজার ১৪০ টন পচা চাল নিয়ে জাহাজ দুটি ২২ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। অবশ্য এ চাল এখনো খালাস করা হয়নি।   

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য বিভাগের ছাড়পত্র না পাওয়ায় চাল খালাসের জন্য জাহাজ দুটিকে বন্দরের জেটিতে নোঙর করার অনুমতি দেয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবুও গতকাল পর্যন্ত ২২ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। এসময় বেসরকারিভাবে চালগুলো দেশের চাল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একটি জাহাজে যত চাল আনা হবে, তার মধ্যে নমুনায় যদি ৪ শতাংশ পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তাহলে জরিমানা আদায় করে খাদ্য বিভাগ তা গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু দুটি জাহাজেই নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার চাল রয়েছে। তাই আমদানি করা চাল জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

চট্টগ্রামের খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা প্রায় ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিয়ে দুটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এর মধ্যে ‘এমভি থাই বিন বে’ নামের একটি জাহাজ ১২ হাজার ২৯০ টন চাল নিয়ে ৩১ আগস্ট এবং ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল নিয়ে ‘এমভি ডায়মন্ড-এ’ নামের অপর চালবাহী জাহাজ আসে ১ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চালগুলো খালাসের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, দরপত্রের শর্তের চেয়ে মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার পরিমাণ বেশি। খাদ্য বিভাগ চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, চালগুলো গ্রহণযোগ্যতার মান থেকে অনেক বেশি মাত্রায় নষ্ট। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খাদ্য বিভাগের চুক্তির শর্ত মতে, চালের নমুনায় যদি ৪ শতাংশ পর্যন্ত মরা, বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যায়, তবে জরিমানা আদায় করে তা গ্রহণ করতে পারবে খাদ্য বিভাগ। কিন্তু দুটি জাহাজে আনা চাল জরিমানা করেও গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তাই সেগুলো আমরা গ্রহণ না করে ফেরত নিতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওলাম ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে মোট ৫০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রথম দুটি চালানেই শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়ে আসা হয়েছে পচা চাল। চালগুলো ফেরত নিতে বলা হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ দুটি চালগুলো বেসরকারিভাবে বিক্রির জন্য দেনদরবার করছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে ব্যবসায়ীরা চালগুলো কেনার আগে খাদ্য বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছেন। ব্যবসায়ীরা চালের প্রকৃত অবস্থা জানায় তা আর কেউ নিতে সম্মত হচ্ছে না।’ চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা পরিষদের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘দেশে চালের সংকট দেখা দেওয়ায় সরকার থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করে। গত ১৩ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করা চাল নিয়ে ১৬টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। এসব জাহাজে আনা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের পচা চালবাহী জাহাজ দুটিও রয়েছে।’ কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশে গম কেলেঙ্কারির পর এবার চাল নিয়ে কেলেঙ্কারি দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এসব চাল খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এই চাল আমদানির সঙ্গে যে বা যারা এবং ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের আইনগত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’ ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারি সংস্থার অবহেলায় খাওয়ার অনুপযোগী চাল আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেওয়ায় সম্পৃক্ত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর