রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিত্তশালী প্রার্থী খুঁজছে জাতীয় পার্টি

১০০ আসনে শিল্পপতি মনোনয়ন দিতে চান এরশাদ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিত্তশালী প্রার্থী খুঁজছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা যেন বিজয়ী হতে পারেন সেজন্য সামাজিকভাবে সুখ্যাতি থাকার পাশাপাশি বিত্তশালী প্রার্থী খুঁজছে পার্টি। আর এ লক্ষ্যে চলছে পার্টিতে একের পর এক বিত্তশালীদের যোগদান। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে শিল্পপতিদের দিয়ে নির্বাচন করাতে চায় জাতীয় পার্টি। সেজন্য সারা দেশে বিত্তশালীদের পার্টিতে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে।জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, দুটি দলের শাসনামল দেখে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সমাজসেবকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জাপায় যোগদানের জন্য যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এখন খুবই শক্তিশালী। প্রতিটি জেলা ও উপজেলাসহ ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত পার্টির কমিটি রয়েছে। অনেক আসনে ৩ থেকে চারজন যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নতুন আইন অনুযায়ী কমপক্ষে তিন বছর দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি আর না থাকায় শিল্পপতিরা যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি জাতীয় পার্টিতে এরশাদের হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেছেন সাবেক স্বাস্থ্যসচিব এম নিয়াজুদ্দিন মিয়া। গাজীপুর (সদর) থেকে তিনি লড়বেন। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কখনো সচিব পর্যায়ের আমলা যোগ দেননি। নিয়াজুদ্দিন ভাওয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। গাজীপুর সদরে তিনি তার নিজ নামে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম এম এম নিয়াজুদ্দিন হাই স্কুল। এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগদান করেছেন, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম রুবেল। যোগদান করেছেন সোনাওগাঁয়ের কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন।

এ ছাড়াও ইতিমধ্যে এস এ টেলিভিশনের স্বত্বাধিকারী সালাউদ্দিন আহমেদ, মাই টিভির স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সাথী, আইসিএল গ্রুপের এমডি শফিকুর রহমান, টাঙ্গাইলের সৈয়দ ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিনসহ অনেকে আগেই পার্টিতে যোগদান করেছেন। তাদের প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত। এ ছাড়া যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান সংসদের এমপি। এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীসহ বহু শিল্পপতির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে জাতীয় পার্টি। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি মানিকগঞ্জে এস এম মান্নান, নাটোরের এম এ তালহা, জাফর ইকবাল সিদ্দিকীসহ অনেক শিল্পপতিকে জাতীয় পার্টিতে এনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করিয়েছিল। এমনিভাবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরেও সারা দেশে বিত্তশালী প্রার্থীর সন্ধান করছে জাতীয় পার্টি।

জানা যায়, দল থেকে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছেন না এরশাদ। দুই শতাধিক আসনে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও অনেকের কাজে সন্তুষ্ট নয় পার্টি। সেজন্য তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে না। ঘোষিত সম্ভাব্য অধিকাংশ প্রার্থীর আসনে নতুন করে বিত্তশালী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সূত্র জানায়, জেলা নেতাদের একাধিকবার গোপন নির্দেশনা দেওয়া হয় আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আর বেশ কিছু এলাকায় এমন কিছু নাম আসছে যাদের প্রার্থী দিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। যে জন্য বিত্তশালীদের দিকে ঝুঁকছে পার্টি। একাধিকবার বলার পরেও কোনোভাবেই ১৫০টির বেশি আসনের নামের তালিকা পাচ্ছে না দলটি। ঘুরে ফিরে বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও ঢাকার আসনে প্রার্থীর তালিকাই জমা হচ্ছে। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ জানান, মানুষের মাঝে একটি বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, জাতীয় পার্টি আগামীতে ভালো করবে। তাই শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের আগ্রহ বেড়েছে।

সর্বশেষ খবর