রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
দূতাবাসের চিঠি

কচ্ছপ মরলে চিংড়ি নেবে না যুক্তরাষ্ট্র

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কচ্ছপ মরলে চিংড়ি নেবে না যুক্তরাষ্ট্র

চিংড়ি চাষ বা ধরার সময় কোনোভাবে সামুদ্রিক কচ্ছপ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ থেকে এ পণ্যটি নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি এক ডিপ্লোমেটিক নোট পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই নোটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একুয়াকালচার শ্রিম্প রপ্তানি সংক্রান্ত আইনের বিধান হচ্ছে, ‘রপ্তানিকৃত সব শ্রিম্প এমনভাবে চাষ করতে হবে যাতে কোনোভাবে সামুদ্রিক কচ্ছপ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’

এ কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে শ্রিম্প রপ্তানি করতে চাইলে সেক্ষেত্রে রপ্তানি/ আমদানিকারককে শিপমেন্টের সঙ্গে ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করতে হবে যে, ওই চিংড়ি চাষে কোনোভাবে কচ্ছপের ক্ষতি হয়নি। এ বিষয়টি মনোনীত উপযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। এ ধরনের স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কারণ হিসেবে দেশটি বলেছে, কোনো দেশ হতে সামুদ্রিক চিংড়ি আমদানির ক্ষেত্রে সেই দেশটি চিংড়ি চাষের সময় কচ্ছপের কোনো ক্ষতি করেনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার বলেন, অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্র আইন করেছে, যে চিংড়ি ধরা বা চাষে কচ্ছপের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। এজন্য সমুদ্র থেকে চিংড়ি আহরণের জন্য ‘টার্টেল এক্সক্লোডার ডিভাইসেস’ (এক ধরনের গিয়ার বা জাল যেটি দিয়ে শুধু চিংড়ি ধরা যাবে, কচ্ছপ আটকাবে না)  ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। এমন কি যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে প্রশিক্ষণেরও প্রস্তাব দিয়েছিল। বর্তমানে চিংড়ি চাষে কচ্ছপের কোনো ক্ষতি হয় না জানিয়ে ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন অনেক বেশি আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি আহরণ ও চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে সামুদ্রিক চিংড়ির পরিমাণ মাত্র ২০০ কোটি টাকা। আবার এর পুরোটাই রপ্তানি হয় জাপানে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র সামুদ্রিক চিংড়ি না নিলেও এটি রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।

রপ্তানি পরিসংখ্যানে অবশ্য বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমে আসছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি আয় কমছে এ খাতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ডলারের মাছ রপ্তানি হয়। পরের দুই অর্থবছরে তা যথাক্রমে ৫৬ কোটি ডলার ও ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে নেমে আসে। চিংড়ি রপ্তানিতে এসব সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি ফ্রোজেন ফুড অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ চেয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ৭ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশনের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠনো হয়। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ততার কথা জানিয়ে ফোন রেখে দেন।

সর্বশেষ খবর