শিরোনাম
রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

আলোচিত সেই বৃদ্ধা মাকে বাড়ি করে দিলেন ডিসি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

দেশব্যাপী আলোচিত নাটক ‘বড় ছেলে’। নাটকটি যারা দেখেছেন তারা লেখক ও অভিনীত চরিত্রগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নাটকের গল্পটি ভাইরালে পরিণত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে খবর হয়েছে। একটি পরিবারের বড় ছেলেদের দায়িত্ব কতটুকু ও পরিস্থিতিকীভাবে সামলাতে হয়- তা লেখক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন নাটকের মাধ্যমে।

এরই জের ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আবদুুল আওয়াল ‘বড় ছেলে’ হিসেবে একটি পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কতটুকু তা নির্যাতিত শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার পর ‘মা’-এর জন্য বাড়ি তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, একটি জেলার জন্য একজন জেলা প্রশাসককে ‘বড় ছেলের’ মতো দায়িত্ব পালন করতে হয়। বর্তমানে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া এলাকার নির্যাতিত বৃদ্ধা মা তসলিমা খাতুন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বৃদ্ধা বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানিয়েছেন। হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার স্থানীয় সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, ভাত খেতে চাওয়ায় বড় ছেলে দবির উদ্দীন বৃদ্ধ ‘মা’কে নির্যাতিত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ওই বৃদ্ধ ‘মা’-এর কাছে এসে পরিত্যক্ত ঝুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করেন এবং ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরপর তিনি বৃদ্ধ ‘মা’ এর জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে ‘বড় ছেলের’ দায়িত্ব পালন করেছেন।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ বেগ জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়ালের নির্দেশে ছেলের হাতে নির্যাতিত বৃদ্ধ মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর, নলকূল ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধ মা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে নতুন বাড়িতে উঠবেন।  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনকে নতুন বাড়ি তৈরির খবর জানানোর পর তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামার ডিসি মোর বড় ছুয়া (আমার বড় ছেলে)। হাসপাতালত মোর প্রতিদিন খবর নিছে (প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছে)। শুনিছু এলা নতুন বাড়ি তৈরি করে দিছে (এখন নতুন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে)। বাড়ি গেলে নতুন বাড়িত থাকিম আর বড় ছেলের তানে দোয়া করিম (বাসায় গিয়ে নতুন বাসায় ডিসির জন্য দোয়া করব)।’ ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, ১৫ আগস্ট গভীর রাতে বৃদ্ধ মাকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে খুবই ব্যথিত হয়েছি। তাই পরদিন সকালে বৃদ্ধ ‘মা’ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। যেহেতু বৃদ্ধ ‘মা’-এর থাকার ঘর নিয়ে সমস্যা, তাই মায়ের জন্য সন্তান হিসেবে একটি টিনের ঘর ও বাথরুম তৈরি করে দিয়েছি। যেন শেষ জীবন পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারেন তিনি। শিগগিরই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বৃদ্ধ ‘মা’ কে নতুন বাড়িটি উপহার দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গ, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউয়ের কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতবর্ষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বৃদ্ধ ‘মা’ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এদিকে ‘মা’ কে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বৃদ্ধ ‘মা’ তার সন্তানের প্রতি ‘কোনো অভিযোগ নেই’ বলে জানান ও ছেলেকে দেখার আকুতি করলে-আদালত নির্যাতনকারী দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করে।

সর্বশেষ খবর