রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অন্যরকম

ক্যান্সার প্রতিরোধে ‘টমাটিলো’

প্রিন্স বিশ্বাস, শেকৃবি প্রতিনিধি

ক্যান্সার প্রতিরোধে ‘টমাটিলো’

টমেটোর মতোই আকৃতি, ভিতরের অংশটি মাংসল, দৃঢ়, উজ্জ্বল সবুজ, রসালো ফলই টমাটিলো। সোলানেসি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত মেক্সিকান সবজিটির বৈজ্ঞানিক নাম Physaslis ixocarpa / philadelphica.। অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির বীজসম্পন্ন। বৃতি দ্বারা আবৃত থাকায় কীটনাশক ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ পুরোপুরি রোধ করা যায়। কচি অবস্থায় দেশীয় বুনো বেগুন বা ফোসকা বেগুনের মতো। তবে পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বাদামি রং ধারণ করে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এর গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি চার বছর গবেষণার পর সাউ টমাটিলো-১ (সবুজ) ও সাউ টমাটিলো-২ (বেগুনি) নামের দুটি জাত সম্প্রতি কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত করেন। রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে এ সবজি কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ হচ্ছে। টমাটিলো কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায়। জ্যাম, জেলি, আচার, সস, স্যুপ ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যাবে।

ড. জেবা বলেন, টমেটোর মতো টমাটিলোতে লাইকোপেন নেই। কিন্তু এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ‘ইক্সোকারপাল্যাক্টোন-এ’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা ক্যান্সার কোষ ও ব্যাক্টেরিয়া কোষের কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করে। টমেটোর তুলনায় অধিক খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ টমাটিলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বক সতেজ রাখে। এতে  রয়েছে শর্করা, আমিষ ও কপার, লৌহ, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে। আরও থাকে উচ্চ মাত্রায় পেকটিন, যা রক্তের সুগার কমাতে বেশ সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে এটি। এ ফলটি অধিক পুষ্টি উপাদান ও কম ক্যালোরিসম্পন্ন হওয়ায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া প্রতিরোধী উপাদানও থাকে। এতে উচ্চমাত্রার দ্রবণীয় ডায়েটারি ফাইবার ‘পেক্টিন’ থাকে।

চাষাবাদ : শীতকালীন এ সবজির বীজ বপন করতে হয় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে। চারা গজানোর ২০-২২ দিনের মধ্যে মূল জমিতে স্থানান্তর করতে হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। টমেটোর তুলনায় এতে ২০-২৫ দিন আগে ফুল আসে। সাউ টমাটিলো-১ এর প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা প্রায় ৭০টি। ফলের গড় ওজন ৭৩ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ৭০ টন। সাউ টমাটিলো-২ এর প্রতি ফলের গড় ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ৫০ টন। সাউ টমাটিলো-২ এর ফলন কম হলেও সাউ টমাটিলো-১ এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর বলে জানিয়েছেন ড. নাহিদ জেবা। উপযুক্ত আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটির উর্বরতা ও অনুকূল পরিবেশের কারণে মেক্সিকোর তুলনায় বাংলাদেশে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে।  টমাটিলোর জমিতে হেক্টরপ্রতি গোবর ১০ টন, ইউরিয়া-৫৫০ কেজি, টিএসপি-৪৫০ কেজি, এমওপি-২৫০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে শেষ চাষের সময় টিএসপি, এমওপি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। পরে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তবে মাটির উপাদানের ভিন্নতার কারণে এমওপি ২/১ বার উপরি প্রয়োগে করার প্রয়োজন হতে পারে। নিয়মিত আগাছা দূর করতে হবে। ফলের ওজন বেশি হওয়ায় উপযুক্ত খুঁটি দিয়ে গাছ সোজা রাখতে হবে। ড. জেবা বলেন, টমাটিলো চাষ করে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হবেন। কারণ টমেটোর চেয়ে টমাটিলোর ফুল ও ফল আগে ধরে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ফসলটি পাওয়া যায় বিধায় কৃষকরা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে অন্য আরেকটি ফসল চাষ করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর