বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমপি ও চেয়ারম্যানের লড়াইয়ে বিপর্যস্ত বাগমারা আওয়ামী লীগ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

এমপি ও চেয়ারম্যানের লড়াইয়ে বিপর্যস্ত বাগমারা আওয়ামী লীগ

সংসদ সদস্য এনামুল হক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর বাগমারা আওয়ামী লীগ। স্থানীয়ভাবে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনামুল হক এবং অপর অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহের পুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। সর্বহারা ও জেএমবি’র জন্য সারা দেশে পরিচিত রাজশাহীর বাগমারায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এলাকাটি আবারও অশান্ত হয়ে ওঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের অভিযোগ, সংসদ সদস্য এনামুল হক সর্বহারা ও জঙ্গিদের মদদ দেন। অন্যদিকে সংসদ সদস্যের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র দলীয় কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হাত তোলেন। দুই পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বাগমারা আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। ফলে সেখানে প্রায়ই ঘটছে সংঘাত। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রশিদকে পেটানোর অভিযোগে জাকিরুল ইসলাম সান্টুসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আবদুর রশিদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। সান্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বাগমারা থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ, তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আনিসুর রহমান, বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী রেজাউল করিমকে মারধর করার। এসব ঘটনায় ওই কর্মকর্তারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর আগে মাহফুজুর রহমান নামের এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, তিনি কাউকে মারপিট করেননি। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাই দলের একটা অংশ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি, হত্যার হুমকি ও মারধরের অভিযোগ আছে বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। গত ২৭ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুলকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন কালাম। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন গোলাম সারোয়ার আবুল। তবে মেয়র আবুল কালাম আজাদ অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার লোকজন জড়িত নন। যারা গুলি চালানো বা মারধরের কথা বলছে, তারা আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এমনটা করছে। তারা এমপির দালালি করছে।

অন্যদিকে এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ অভিযোগ করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুস সোবহান চৌধুরী বর্তমান দলের সভাপতি এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। আবদুস সোবহান চৌধুরী বলেন, এতদিন ঘাপটি মেরে থাকা জেএমবি, সর্বহারা সদস্যরা এখন এমপি এনামুল হকের মদদে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এতে বাগমারার মানুষ আবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তিনি বলেন, সর্বহারা ও জেএমবি ক্যাডাররা এমপি এনামুলের ছত্রছায়ায় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাসারের মতো সাবেক যুবদল ও শিবিরের নেতাদের হাতে এমপি এনামুল অস্ত্র তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বাদ দিয়ে জেএমবি ক্যাডারদের প্রার্থী করেছেন। এর মাধ্যমে দলের ভিতরে সৃষ্টি করেছেন কোন্দল। এমপি এনামুল আধাসরকারি (ডিও) চিঠি দিয়ে কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে জামিনে মুক্ত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজ নিলে এমপি এনামুলের জঙ্গি সম্পৃক্ততার সত্যতা মিলবে। তার কাছে আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়। তিনি জামায়াত-শিবির-জঙ্গিদের লালন-পালনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। আর ত্যাগী নেতা-কর্মীদের তিনি ধ্বংস করছেন। আগামীতে এ আসনে তাকে মনোনয়ন দিলে দলের বিজয় সম্ভব নয়। বিগত নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করায় নেতা-কর্মীরা এখন অনুতপ্ত। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে এমপি এনামুল হক বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর জেএমবি-সর্বহারাদের নির্মূল করেছি। যারা অভিযোগ করছেন, তারা আমার আগে থেকেই এলাকায় নেতৃত্ব দেন। তাদের মদদেই জঙ্গি-সর্বহারার উত্থান। সব নির্বাচনে তারা দলের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও তারা সক্রিয়।

সান্টুকে বহিষ্কারের সুপারিশ : বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য এনামুল হকের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান টুকু জানান, দলীয় ফোরামে আলোচনা না করে জাকিরুল ইসলাম সান্টু দলের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি দলীয় এমপি ও সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রখেছেন। এ কারণে সভায় উপস্থিত সদস্যদের সবার মতামতের ভিত্তিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তারা বৈঠকের চিঠি পাওয়ার পর তদন্ত করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

সর্বশেষ খবর