শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলোচনায় খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম

দিনাজপুর প্রতিনিধি

আলোচনায় খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিম

আগামী সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর সদর-৩ আসনে বিএনপি দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। আর এ আহ্বান আরও জোরালো হয়েছে বিএনপিদলীয় জোটের জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ইন্তেকালের পর।

তবে এ আসনে তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীসহ প্রায় সবাই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী হিসেবে চায়। বেগম খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হলে দলের গ্রুপিং লবিং কমে যাবে। পাশাপাশি দিনাজপুরের ৬টি আসনের নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে এবং নির্বাচনের সমীকরণ বদলে দিতে পারে বলে রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন।

অপরদিকে, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের          মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ সদর আসনে ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বিএনপির প্রার্থী খুরশীদ জাহান হকের কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটি বিএনপির ছিল। এরপরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন ও সাবেক মন্ত্রী বেগম খুরশিদ জাহান হক চকলেট আপা ২০০৬ সালে মারা যাওয়ার পর এ আসনে প্রার্থী সংকট দেখা দেয়। দেখা দেয় দলের মধ্যে গ্রুপিং-লবিং। এরপরেও গত নবম সংসদ নির্বাচনে অনেক চেষ্টা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হন জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বিএনপির একটি অংশ তাকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। আর দলীয় দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং থাকার পরেও লক্ষাধিক ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম ইকবালুর রহিমের কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ সালে হারানো আসন ২০০৮ সালে ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে মহাজোটের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবালুর রহিম বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এই বিজয় তিনি ধরে রাখেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও। আগামী নির্বাচনেও জয়লাভের লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে আছেন তিনি।

জেলা সদরের সংসদীয় আসনে টানা দুইবার নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করলেও ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম পরাজিত হন। নেতা-কর্মীদের ধারণা, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তিনি পরাজিত হয়েছেন।

অপরদিকে, সদরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অনেকে মনে করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইকবালুর রহিম এমপি ও তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা ব্যাপক জনসংযোগ, সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে, রাস্তার মোড়ে শোভা পাচ্ছে ইকবালুর রহিম এমপির উন্নয়নের বিলবোর্ড ও পোস্টার। ইকবালুর রহিম ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সম্প্রতি তিনি সমাজের অবহেলিত হিজড়া সমপ্রদায়ের জন্য মানবপল্লী ও বৃদ্ধাশ্রম গমড় তোলে ‘ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশন’ (ডব্লিউএলএফ) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

গত ২১ মে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ইন্তেকালের পর থেকে আবারও আলোচনায় আসছে এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া নাকি পরিবারের অন্য কেউ, না দলের কোনো প্রার্থী? এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বড় দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। বিএনপির প্রার্থী যেই হোক না কেন, ধানের শীষে ভোট দেবে মানুষ। কারণ আওয়ামী লীগের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। ঘর থেকে বের হলে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আর নির্বাচনে দলের পক্ষে যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব। তবে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী হিসাবে চাই। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক মন্ত্রী মরহুমা বেগম খুরশিদ জাহান হকের বড় ছেলে শাহরিয়ার আকতার হক ডন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও দুইবার বিজয়ী দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তবে এ আসনে জোটের শরিক দল জামায়াতের কারও নাম আলোচনায় নেই। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল জানান, এ আসনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকলেও গত ৮ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের যে প্রত্যাশা ছিল সে প্রত্যাশা পূরণ আজও হয়নি। এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা আশফাক। জাপা এককভাবে নির্বাচন করলে জাপা দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শফি রুবেল এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এখন বিভিন্ন আড্ডায় আমজনতা বিগত বিএনপি দলীয় জোট ও বর্তমান মহাজোট সরকারের উন্নয়নের পার্থক্য ও মূল্যায়ন-অবমূল্যায়নের হিসাব-নিকাশ কষছেন।

সর্বশেষ খবর