কর্তৃপক্ষীয় তাগাদা অবিরাম। তবুও সাভারের হরিণধরা এলাকায় স্থাপিত চামড়া শিল্প নগরীর কারখানাগুলোয় আসছে না উৎপাদন গতি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারেও গলদ। এতে সৃষ্টি হয়েছে আরেক ঝামেলা। স্থানীয়দের মতে, বর্জ্য শোধনাগারের সমস্যাটিই এখন প্রধান সমস্যা হতে চলেছে। বিসিক চালিত এই শিল্প নগরীতে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকার হাজারীবাগের ১৫৪টি কারখানা। কিন্তু উৎপাদন শুরু করেছে ৮২টি। এদের আবার অনেকেই তাদের উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করছে না। আংশিক উৎপাদন করছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, ‘হাজারীবাগ থেকে হরিণধরায় যাও’ কথাটা যত জোর দিয়ে বলা হচ্ছে তত জোর দিয়ে হরিণধরায় চামড়াশিল্প কারখানার উপযুক্ত অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি। বরাদ্দকৃত প্লটের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকতে না দেওয়ায় বেশকিছু কারখানা সেখান থেকে তড়িঘড়ি এখানে চলে আসে। কিন্তু এদের ভবন নির্মাণ কাজও পুরোপুরি এখনো শেষ হয়নি। একতৃতীয়াংশ কাজ এখনো বাকি। জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কারখানা হিসেবে ২৮টির ছাদ ঢালাই হয়েছে। ভবন নির্মাণের পর চামড়া প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র, গ্যাস ও পানি সংযোগ এবং সুষ্ঠু ড্রেনেজের অভাবে এসব ট্যানারি পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গতিময় ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কারখানা মালিক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উভয়েরই গড়িমসি হয়েছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারটি ত্রুটিমুক্ত নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, শোধনাগারের ত্রুটির কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যার মতোই সাভারের বংশী নদীও দূষিত হবে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প হরিধরায় নিয়ে আসার পিছনে একটাই যুক্তি ছিল, তা হচ্ছে রাজধানীর জীবনরেখা নামে পরিচিত নদীগুলোর জীবন বাঁচানো। এখন দেখা যাচ্ছে একদিকে জীবন বাঁচছে আর অন্যদিকে জীবনহানির বন্দোবস্ত হতে চলেছে। বুড়িগঙ্গা ও ঢাকার অন্যান্য নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতেই ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকের বৈঠকে সাভারে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য নির্দিষ্ট করা হয় ২০০ একর জমি। ২০০৯ সালের ২৩ জুন উচ্চ আদালত ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দেয় ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিতে হবে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, সাভারের ট্যানারি শিল্প যদি এই এলাকার নদীকে বিপর্যস্ত করে তাহলে তারা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চামড়া শিল্প নগরীর সড়কগুলো সংকীর্ণ, ছোট ব্যাসের পাইপ দিয়ে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। এসব পাইপ মাত্র ৮২টি ট্যানারির আংশিক চাপই নিতে পারছে না। পূর্ণাঙ্গা উৎপাদন শুরু হয়ে গেলে তো অকল্পনীয় সমস্যার সৃষ্টি হবে। অতিরিক্ত চাপের কারণে ড্রেনের বিষাক্ত পানি রাস্তায় ওঠে গেছে। এর ফলে এখনো নির্মাণাধীন ট্যানারিগুলোর এলাকার চারপাশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দেখা গেছে, রাজীব ট্যানারি ও মিটিলি ট্যানারির সামনে এতই অবস্থা। এদিকে কেন্দ্রীয় শোধনাঘারের বর্জ্য নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আহসান উল্লাহ ও আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদিতে ফেলা হচ্ছে। এখনো তো সব কারখানা চালু হয়নি। সবগুলো চালু হলে বিষাক্ত বর্জ্যের দূষণে ধলেশ্বরীর অবস্থা বুড়িগঙ্গার চাইতেও করুণ হয়ে ওঠবে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিক চেয়ারম্যান মুসতাক হাসান মোহাম্মদ ইখতিখার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারে (সিইটিপি) একটু সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যার প্রতিকারে জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো) অবকাঠামোগত উন্নয়নের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।