শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
শেরপুর শহরে চাঞ্চল্য

যোগীর আস্তানায় সূরা ও গীতা পাঠ!

শেরপুর প্রতিনিধি

শান্তানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক যোগী তার আস্তানায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সূচনা করেছেন সূরা ফাতেহা ও গীতা পাঠের মাধ্যমে। প্রথমে পড়া হয়েছে সূরা ফাতেহা। এর পরে গীতা। যোগীর আস্তানা শেরপুর শহরের পোদ্দার কমপ্লেক্স ভবনের ৪র্থ তলায়। অনুষ্ঠানে ব্রহ্মচারীর ভাষণ শোনার জন্য মুসলমানরাও ভিড় করছেন। আস্তানার কোথাও পূজামণ্ডপ নেই।

অনুষ্ঠানে তিনি দুর্গতিনাশিনী দুর্গার ৯টি রূপ তুলে ধরেছেন। সেখানে ঢোল বাজনা নিষিদ্ধ। তবে সহনীয় মাত্রার আওয়াজে দুর্গাদেবীর আরাধনায় মানবতাবাদী গান পরিবেশন চলছে। চলছে আত্মক্রিয়াযোগ।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই আস্তানায় শান্তানন্দ এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন। তিনি তার ভাষণে গতানুগতিক লৌকিক দুর্গাপূজার বিরোধিতা করে বলেন, ধর্মের নামে গুরু নামধারী ব্যক্তিরা এখন অধর্ম করে চলেছেন। বিকালে আস্তানায় মিলাদ হয়েছে। ডাক্তারকে দিয়ে ২ শতাধিক মানুষের চিকিৎসা করা হয়। ব্রহ্মচারী নামাজের সময় বিরতি দিয়ে সন্ধ্যার পর ভক্তদের ধর্মোপদেশ ও মানবতার দীক্ষা দিচ্ছেন। আলাপচারিতায় শান্তানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের মূল হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ (ফাতেহা) আর সনাতন ধর্মের মূল পাঠ্য বেদের গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ একই। দুর্গাপূজাকে যেহেতু সার্বজনীন বলা হয় তাই এখানে সব ধর্মের গ্রন্থ পাঠ করলে দোষের তো কিছু নেই।’ সনাতন ধর্মের মানুষ গতানুগতিক যে দুর্গাপূজা করছেন তা তামসা ও রাজসিক। ব্রিটিশ আমলে ১৭৫৭ সালে রাজা কংস নারায়ণ ও ব্রিটিশের দালাল জমিদার নবকৃষ্ণ ব্রিটিশদের খুশি করতে দুর্গাদেবীর মূর্তি বানিয়ে নারী সমাগম ঘটিয়ে এমন আয়োজন করতেন। তা দেখে প্রভাবিত একদল ব্রাহ্মণ মদ খেয়ে দেবীর পূজার নামে অধর্ম চালু করেছেন। দেবী দুর্গার রূপ নারীর রূপ হতে পারে না। অমঙ্গলনাশিনী দুর্গা নানা রূপে পৃথিবীতে এসেছেন। ব্রহ্মচারী বলেন, ধর্ম অনুভবের বিষয় যা আত্মক্রিয়ার মাধ্যমে আয়ত্ত হয়। তথাকথিত কোনো পূজাতেই সাত্তিক (অনুভব) বিষয় নেই, আত্মিক কোনো বিষয়ও নেই।

সনাতনী এই যুবক শান্তানন্দর এসব কথাবার্তায় তার ওপর খুবই কুপিত শেরপুরের ব্রাহ্মণরা। সামাজিক গণমাধ্যমে ব্রহ্মচারীর পক্ষে-বিপক্ষে এখন শান্তানন্দর এক ভক্ত লব দে বলেন,  ব্রাহ্মণরা এই ধর্মগুরুকে হত্যার চেষ্টা করছে। নানাভাবে হয়রানিরও চেষ্টা করছে। শেরপুর জেলা পুরহিত কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, যোগী নামের আড়ালে নাস্তিক শান্তানন্দ কটাক্ষ করছেন হাজার বছর ধরে চলে আসা হিন্দু নিয়ম কানুনকে। মনগড়া কথা বলে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছেন। এতে হিন্দু সমাজের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। তিনি বলেন, পূজার পর তার বিরুদ্ধে আইনি ও ধর্মীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শান্তানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, ব্রাহ্মণদের সঙ্গে বাহাস করতে তিনি প্রস্তুত আছেন। তিনি বলেন, ‘বিতর্ক হতে হবে ধর্মগ্রন্থ বেদ, রামায়ণ ও মহাভারতের ভিত্তিতে। জোর জবরদস্তি এখানে চলবে না। চলবে যুক্তি আর পাল্টা যুক্তি প্রদর্শন।’

সর্বশেষ খবর