শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পোকা দমনে লাইভ পার্চিং

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পোকা দমনে লাইভ পার্চিং

নওগাঁর রানীনগরে দিন দিন লাইভ পার্চিংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। লাইভ পার্চিং ব্যবহার করায় কমছে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার, অন্যদিকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। লাইভ পার্চিংয়ের পাশাপাশি ডেথ পার্চিংও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ধানের খেতে পোকা দমনের পাশাপাশি মাটির নাইট্রোজেনের ঘাটতিও পূরণ হচ্ছে। এতে ফসলে কীটনাশক স্প্রের বাড়তি খরচ যেমন হচ্ছে না, তেমন বাড়ছে ফসলের উৎপাদনও।

উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ফসলের খেতের মাঝে ধৈঞ্চার বড় বড় গাছ। যে গাছগুলোর ওপর বসে আছে বিভিন্ন ধরনের পাখি। এ পাখিগুলো কিছুক্ষণ পরপর জমির খেতের মধ্যে থাকা পোকাগুলো ধরে ধরে খেয়ে নিচ্ছে। এতে ফসল রক্ষা পাচ্ছে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে। আর এই পোকা-মাকড় নিধন করার জন্য কম পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক। দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়। এ জমিগুলোয় আফ্রিকান ধৈঞ্চা দিয়ে লাইভ পার্চিং করা হয়। এ পার্চিং পরিবেশবান্ধব জৈবপ্রযুক্তি। এ ধৈঞ্চা গাছে পাখি বসে খেতের মাজরা পোকাসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলে, ফলে কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিঘাপ্রতি ৪-৫টি ও একরপ্রতি ১৩-১৪টি ধৈঞ্চা গাছ লাগিয়ে পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করা যায় ধান খেত। আগের বছরের তুলনায় এ বছর মাঠে এ লাইভ পার্চিং চোখে পড়ার মতো। এ বছর এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুফল পাওয়ায় উপজেলার কৃষকদের অনেকেই এখন এ পথ বেছে নিয়েছে। শুধু পোকা নিধনই নয়, লাইভ পার্চিংয়ে ব্যবহূত ধৈঞ্চার গাছের দেহে ও শিকড়ে বড় বড় নভিউল থাকে। যেখানে রাইজোরিয়াম ব্যাকটেরিয়া থাকে যা প্রকৃতির বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে। আবাদের পর জমি চাষের সময় এ ধৈঞ্চাগুলো জমিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে সমতা রক্ষা করে। তাই আলাদা করে আর জমিতে আবাদের সময় নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করতে হয় না। উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে তিনি ৫ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন রোপা আমন। পাশাপাশি জমিতে ৪০টি ধৈঞ্চা গাছ লাগানোর ফলে পোকা-মাকড় দমন হচ্ছে। এ ছাড়া জমিতে যোগ হচ্ছে নাইট্রোজেন। একবার কীটনাশক স্প্রে করার পর আর প্রয়োজন হয়নি। দিতে হচ্ছে না ইউরিয়া সারও। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে রানীনগরে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকের মাঝে। বিশেষ করে আফ্রিকান ধৈঞ্চা গাছ দারুণ উপকার করছে জমির খেতের। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধৈঞ্চার পুরো গাছে নুডুল রয়েছে; যা বায়ুমণ্ডল থেকে নাটট্রোজেন গ্রহণ করে, ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম সারওয়ার জানান, কৃষি বিভাগ কৃষকদের এই পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে। বরেন্দ্রভূমি খ্যাত এ উপজেলার পুরো খেত আগামীতে ধৈঞ্চা পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ লাইভ পার্চিং ব্যবহারের ফলে ফসল কাটার পর কৃষক পাচ্ছে বাড়তি জ্বালানি চাহিদা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ফসলের উৎপাদনও। লাইভ পার্চিংয়ের ব্যবহার বাড়াতে ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসসহ বিএডিসি। ফলে রানীনগরে লাইভ পার্চিংয়ের সাড়া পড়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর