রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হানিফের চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল আসন উদ্ধারে তৎপর বিএনপি

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

হানিফের চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল আসন উদ্ধারে তৎপর বিএনপি

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি ছোট দলগুলোর নেতারাও গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। দর্শনীয় স্থানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রং-বেরঙের ব্যানার-ফেষ্টুন।

গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে উন্নয়ন কাজকে গতিশীল করার ওপর জোর দিয়েছেন। আর আসন ফিরে পেতে তৎপর বিএনপি। মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের বাসিন্দা হলেও জোটগত নির্বাচনের কারণে আসনটি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ছেড়ে দিতে হয়। ফলে গত নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফের প্রার্থী লিটন হোসেন। দুর্বল প্রার্থী লিটনকে সহজেই পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হানিফ। তবে আাাগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে হানিফের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অতটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন দলের অনেকে। বিশেষ করে দলীয় কোন্দলের কারণে এবার তাকে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। বিগত সময়ে এ আসনে বিএনপি উন্নয়নের যে সব ওয়াদা করে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছিল তার প্রায়ই সবই বাস্তবায়ন করেছেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিশেষ করে জনগণের দুই যুগের দাবি কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও বাইপাস সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি করতে পেরেছেন। এ ছাড়া ছোট বড় অসংখ্য উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু এত সব ভালো কাজের পরও বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের মাঠে লড়াই জমে যাবে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হন। আর জামায়াত যদি বিএনপিকে সমর্থন দেয় তাহলে এ ভোটের পরিমাণ আরও বাড়বে। আর হানিফের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল। গত কয়েক বছরে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছেন ছয় নেতা-কর্মী। এ ছাড়া দল ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতার অপকর্মের কারণে দলের তৃণমূল ও জেলার বেশ কিছু নেতা চরম ক্ষুব্ধ। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম মনে করেন, আগামী নির্বাচনে মাহবুব-উল আলম হানিফকে জিততে তেমন বেগ পেতে হবে না। তিনি জনগণের জন্য অনেক কাজ করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা উঠান বৈঠক করছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী মাঠে আছে। কুষ্টিয়া সদর আসনে মাহবুব-উল আলম হানিফ ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী। দু’দুবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হলেও তিনি চেয়ারে বসতে পারেননি। এবারো দলীয় মনোনয়ন কিনবেন বলে জানান এ নেতা। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পৌর মেয়র আনোয়ার আলী ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আনোয়ার আলী এর আগে বেশ কয়েকবার মনোনয়ন পেলেও পরাজিত হন। আর ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যান বিএনপির প্রার্থীর কাছে। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে স্বাধীনতার পর বেশির ভাগ সময়ই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। দীর্ঘ সময় পর ২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার রশীদুজ্জামান দুদু এমপি নির্বাচিত হন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই শহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগ করছেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় খন্দকার দেলোয়ার  হোসেনের সঙ্গে থেকে অন্দোলনে ভূমিকা রাখায় দলীয় মহলে তার আলাদা পরিচিতি আছে। বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সদরে সোহরাব উদ্দিনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি দিন-রাত দলের জন্য কাজ করছেন। তিনি দলের সবার কাছে জনপ্রিয়। অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন জানান, আমরা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, এবার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করবে। সোহরাব উদ্দিনের বাইরেও বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারাও মনোনয়ন চাইবেন দলের কাছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শামীম উল হাসান অপু। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু,  জাতীয় পার্টি জাফর গ্রুপ থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী লাহরি এবং জাসদ (ইনু) থেকে গোলাম মহসিন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

সর্বশেষ খবর