রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইন সংশোধনের সাত বছরেও বিধিমালা হয়নি

প্রবাসীদের ভোটার করা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবাসী বাংলাদেশি প্রায় কোটি নাগরিককে ভোটার করতে আইন সংশোধন করার সাত বছরেও বিধিমালা হয়নি। তারা কী পদ্ধতিতে ভোটার হবেন বা ভোট দেবেন তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই নির্বাচন কমিশনের। প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য থাকলেও তা বেশ জটিল প্রক্রিয়া বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা। দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটার। এর মধ্যে প্রায় কোটি বাংলাদেশি প্রবাসে রয়েছেন। ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইনে সংশোধনী এনে বলা হয়, ‘কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে, তিনি সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকায় বা ভোটার এলাকায় বসবাস করেছেন অথবা তার নিজ বা পৈতৃক বসতবাড়ি যে স্থানে অবস্থিত ছিল বা রয়েছে; তিনি সেই এলাকার অধিবাসী বলে গণ্য হবেন।’ গত ২২ আগস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এক অনুষ্ঠানে প্রবাসী যারা দেশে আসবেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে বিশেষ নির্দেশনার কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশি       নাগরিকদের ভোটার করা ও ভোটদানের ব্যবস্থা করার ব্যাপারটি খুবই জটিল প্রক্রিয়া। দলগুলো কমিশনে এসে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারিগরি ও বাস্তবতা বিবেচনায় আপাতত তা করা দুরূহ।’ ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন প্রবাসীদের ভোটার ও ভোটাধিকার নিয়ে উদ্যোগী হয়। এ সময় দুই নির্বাচন কমিশনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফরও করেন। এই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন আনে। ওই কমিশন বলেছিল, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থান করে ভোটদান পদ্ধতির বিষয়টি বিধিমালায় সংযুক্ত করা হবে। এ ছাড়া কোন পদ্ধতিতে, কীভাবে ভোটার করা হবে তাও বিস্তারিত থাকবে বিধিমালায়। প্রবাসীরা ইচ্ছা করলেই ভোটার হতে পারবেন, কোনোভাবেই তা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটার করার পদ্ধতি ও ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা করার উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ১৮টি দলসহ সুশীলসমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে। অধিকাংশই প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬২টি দেশে ১ কোটির মতো বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। এর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিক ভোটার বা ১৮ বছরের বেশি বয়সী হতে পারেন, যাদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে। ইতোপূর্বে প্রস্তাব আসে, ইসি বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে ভোটার আবেদন ফরম পাঠাবে। দূতাবাস থেকে সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে আবার দূতাবাসেই জমা দেবেন। এরপর দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী জেলাভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাবে ইসির কাছে। ইসি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করবে। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করায় আইন সংশোধন হলেও এখন প্রয়োজনীয় বিধিমালা করতে হবে। কীভাবে ভোটার করা হবে তা নিয়েও ভাবতে হবে। কয়েকটি দেশের দূতাবাসে পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে; একই আদলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও সহজতর নয়। প্রবাসীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে কয়েকটি দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার ও এনআইডি দেওয়ার পরীক্ষামূলক কাজটি করা যেতে পারে। তবে সহসাই এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাবে কিনা সংশয় রয়েছে। ৩০০ আসনের ব্যালট পেপার, প্রয়োজনীয় ব্যালট বাক্সসহ নানা কারিগরি ও সামগ্রী প্রবাসে সরবরাহ প্রায় অসম্ভব। পাশের দেশ ভারতসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই প্রবাসীদের ভোট প্রক্রিয়া নিতে পারেনি। তবে প্রবাসীরা দেশে ফিরলে যাতে দ্রুত ভোটার তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয় সে বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর