মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুতে প্রমাণ হয়েছে আমরাও পারি : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুর ওপর প্রথম স্প্যান বসানোর খবরে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি, আমরাও করতে পারি’ ... ‘আমি খুব খুশি’।

গত রবিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের রিটজ কার্লটন হোটেলে দেশটির বিভিন্ন স্টেট থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, গলব্লাডার অপারেশনের পর চিকিৎসকরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি তা উপেক্ষা করেই দেখা করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। খবর বাসসের।

অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে আবেগতাড়িত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা যা চাই, তাই করতে পারি। যদি আমরা সৎ ও সংকল্পবদ্ধ থাকি।’ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর নিজেদের অর্থায়নেই তা করে দেখানোর সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়াকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশের জন্য বড় সিদ্ধান্ত। নিজেদের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা আমাদের ভাবমূর্তির সঙ্গেও জড়িত।’ তিনি বলেন ‘পদ্মার মতো একটি খরস্রোতা নদীতে এমন বড় মাপের সেতু নির্মাণ কাজে হাত দিয়ে আমরা বিশ্বের বুকে উদাহরণ সৃষ্টি করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে জনগণের জন্য রাজনীতি করি, জনগণের জন্য কাজ করি এবং আমরা পারি তা প্রমাণ করেছি।’ তিনি স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য দেশি-বিদেশি সব বাংলাদেশিকে অভিনন্দন জানান। প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর শনিবার শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে প্রথম স্প্যান বসানোর ফলে এটি এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

দুর্দশাগ্রস্ত মিয়ানমারবাসীর জন্য প্রয়োজনে একবেলা খাব : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যদি প্রয়োজন হয় দিনে একবেলা খেয়ে আরেক বেলার খাবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের  সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবে। যদি আমরা ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারি, প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের এই দুর্দিনে আরও পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা দিনে একবেলা খেয়ে আরেক বেলার খাবার এই নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত শরণার্থীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করব। আমরা মানুষ, আমরা মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমরা ধনী না, তবে আমাদের মন আছে। তারা মানুষ, আমরা তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলতে পারি না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ‘ভাসানচর’-এ স্থানান্তর করা হবে। বেসামরিক প্রশাসন এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও তার দলের স্বেচ্ছাসেবীরা এসব মানুষের কষ্ট লাঘবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিদেশি সাহায্যের অপেক্ষা না করে আমরা নিজেরাই রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া এবং ওষুধসহ চিকিেসবার ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছেন। বিপুলসংখ্যক অসহায় মানুষকে বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতায় মুগ্ধ। তিনি বলেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা এসব ভয়াবহ ঝুঁকিকে সমূলে উৎপাটনে পরস্পরকে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে থেকে শিক্ষা গ্রহণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ  শিশুর মায়েদের মাঝে অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে। সরকার উচ্চশিক্ষার জন্যও শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করছে। সরকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করছে।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থানস্থল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ প্রতিকৃতি উন্মোচন করেন। বিখ্যাত ভাস্কর স্টিফেন ওয়াইজম্যান ব্রোঞ্জের এই প্রতিকৃতিটি তৈরি করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির বিক্ষোভ : এনআরবি নিউজ জানায়, গত রবিবার ভার্জিনিয়ার টাইসন কর্নার সংলগ্ন রিটজ কার্লটন হোটেলে শেখ হাসিনার উপস্থিতির সময় বিএনপির লোকজন বিক্ষোভ করেন। তারা স্লোগান দেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি’, ‘উই ওয়ান্ট হিউমেন রাইটস’, ‘স্টপ কিলিং ইনোসেন্ট পিপল ইন বাংলাদেশ’, ‘হাসিনা গো ব্যাক-হাসিনা গো ডাউন’, ‘রিস্টোর ডেমোক্রেসি’, গণহত্যার পরিণাম-বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ ইত্যাদি।

জনা পঞ্চাশেক বিএনপি নেতা-কর্মীর এই কর্মসূচির সময় একটু দূরেই শান্তি সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের কয়েকশ কর্মী।  এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করলেও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। বিএনপির এ কর্মসূচির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ জে এম হোসাইন।

সর্বশেষ খবর