বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীর মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীর মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

ফরিদপুর জেলায় চারটি সংসদীয় আসন থাকলেও সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় এখানে তাই সবার নজর। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ আসনের সংসদ সদস্য। আগামীতেও  তিনি এখান থেকে নির্বাচন করবেন। আর বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। আসনটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটি মূলত বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভোট দুর্গে প্রথমবারের মতো আঘাত হানেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেবার বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। সে নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো পরাজিত হন। যদিও তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। আর মুজাহিদ জামানত হারিয়েছিলেন। গত নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। একসময় দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত ছিল ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি হওয়ার পর দলীয় কোন্দল নেই বললেই চলে। ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বিএনপির যে ‘ভোট দুর্গ’ ছিল তাও এখন আর নেই। খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার উন্নয়ন দিয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে তিনিই মাঠে ছিলেন এবং আছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘নৌকা’ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ভোট দিয়ে জয়ী করতে মাঠে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের এই শক্তিশালী অবস্থানের মধ্যেও একটি অংশ ‘নাখোশ’ আছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মুজাহিদের একরোখা নীতির কারণেই ফরিদপুর সদর আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয় বলে দলটির নেতা-কর্মীদের দাবি। বিগত দিনে ফরিদপুরের অন্য আসনগুলো আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও সদর আসনটি ছিল বিএনপির। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের একক নেতৃত্বে সদর আসনে বিএনপি ছিল অজেয়। ফলে টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তিনবার মন্ত্রী থাকার ফলে এলাকায় তিনি উন্নয়ন করেছেন সাধ্যমতো। কিন্তু দলীয় কোন্দলের কারণে সেই দুর্গে এখন ভাঙন লেগেছে। দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা-কর্মী দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের সম্মেলন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি না হওয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফরিদপুরের ১১টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা ৬টিতে ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৫টিতে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির ছয়জনের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। অনেকেই ক্ষোভ আর হতাশায় দলীয় কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গোপনে ও কৌশলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ মাঝেমধ্যেই এলাকায় থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহাবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু। কয়েক মাস ধরে তিনি সদর আসনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিচ্ছেন। সর্বশেষ ঈদ ও পূজায় তিনি সদর আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে দরিদ্র মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণসহ সামাজিক ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রচার চালান। আবার স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর বেশ ভোট রয়েছে। যদিও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দলের সেক্রেটারি জেনালের আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর থেকে জেলায় জামায়াতের কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। প্রকাশ্যে দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এখন নীরবেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করে, সদর আসনে জামায়াতের ভোট জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। একসময় ফরিদপুর জেলায় জাতীয় পার্টির শক্ত একটি অবস্থান থাকলেও এখন আর নেই। দীর্ঘদিন ধরে দলের কোনো কর্মসূচি না থাকায় নেতা-কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াহ-হিয়া নির্বাচন করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে জাতীয় পার্টি এখনো শক্তিশালী। আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কয়েক মাসের মধ্যে জেলা সম্মেলন করা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে আমরা দলকে সংগঠিত করছি।’ ফরিদপুর সদর আসনে জাকের পার্টির কিছু ভোট থাকলেও তা চলে যায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাক্সে। এখন পর্যন্ত জাকের পার্টির প্রার্থী হিসেবে কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। জেলা কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান যাদু মিয়া জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে জাকের পার্টি।

সর্বশেষ খবর