বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হলো পায়রা সেতু

উত্তর প্রান্তে দাঁড়িয়ে ১০ পিলার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন

রাহাত খান, বরিশাল

দৃশ্যমান হলো পায়রা সেতু

লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মাণাধীন পায়রা সেতু এখন দৃশ্যমান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মাণাধীন পায়রা সেতু এখন দৃশ্যমান। ১৪ মাসে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৩ ভাগ। পিলার দাঁড়িয়েছে ১০টি। চলতি মাসে দৃশ্যমান হবে আরও ৯ পিলার। নদীর দুই তীরে দিনরাত ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী-শ্রমিক-কারিগররা। কাজের পরিবেশেও সন্তুষ্ট চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। নির্মাণাধীন সেতু জাগিয়ে তুলেছে পুরো এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আশা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের।

একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখার বিরল সুযোগ সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায়। এ কারণে বিশ্বের অনেক পর্যটন স্পটের চেয়ে সাগরকন্যা-খ্যাত কুয়াকাটার আলাদা কদর রয়েছে পর্যটকদের কাছে। কিন্তু সড়কপথে কুয়াকাটা যেতে ঝক্কি-ঝামেলার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতেন অনেকে। আগে বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যেতে ৬টি পয়েন্টে পার হতে হতো ফেরি। কয়েক বছরে ৫টি পয়েন্টে ফেরি হওয়ায় দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হলেও পুরোপুরি কাটেনি।  বরিশাল ও পটুয়াখালীর সীমান্তবর্তী পায়রা নদী পয়েন্টের ফেরি পার হতে যানবাহনগুলোকে এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বলে জানিয়েছেন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়ন বিভাগীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম খন্দকার। ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হলে এই সড়ক চলাচলে মানুষের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. মিন্টু। গত বছরের জুলাই মাসে কুয়েত সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২৬তম কিলোমিটারে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দিনরাত কর্মমুখর পায়রা নদীর দুই তীর। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় খুশির জোয়ার বইছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। বাকেরগঞ্জের লেবুখালীর প্রবীণ আসলাম গাজী বলেন, পায়রা নদীতে সেতু হবে- এটা তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ওই এলাকার মানুষের জীবন-মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। বেড়ে গেছে জমির দাম। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ পায়রা সেতু নির্মিত হচ্ছে পর্যটনের কথা বিবেচনায় রেখে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে। চারলেনবিশিষ্ট সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের লং জিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার মো. মাসুদুর রহমান জানান, দেশি-বিদেশি শ্রমিক-কারিগর এবং প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা দিনরাত কাজ করছেন। সেতুর কাজের মান শতভাগ নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এখানকার কর্মপরিবেশেও প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিরা খুশি বলে তিনি জানান। পায়রা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক আবাসিক প্রকৌশলী মনজিত কুমার সাহা জানান, রবিবার পর্যন্ত পায়রা সেতুর ১৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর উত্তর প্রান্তে ১০টি পিলার দৃশ্যমান হয়েছে। উত্তর পাশে আরও দুটি পিলার নির্মাণের লক্ষ্যে পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর প্রান্তে মোট ১২টি পিলার দৃশ্যমান হবে। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তেও পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আশা করছেন প্রকৌশলী মনজিত কুমার সাহা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর