বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০ সুপারিশ

গলার কাঁটা সিটিং সার্ভিস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গণপরিবহনে নৈরাজ্য এবং সিটিং সার্ভিসের দৌরাত্ম্য বন্ধে সুপারিশমালা চূড়ান্ত করেছে সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রী সেবা কমিটি। এতে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া ও স্টপেজ নির্ধারণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কমিটির সদস্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নির্ধারণসহ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে সিটিং ও ননসিটিং গাড়ির রং আলাদা করা হবে। মানুষ যেন দূর থেকে দেখলেই বুঝতে পারেন গাড়ি সিটিং কি না। এরসঙ্গে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া এবং রুট নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। গণপরিবহনের মালিকানা থাকবে চার-পাঁচটি কোম্পানির হাতে। ফলে বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার দৌরাত্ম্য কমবে। সিটিং সার্ভিসের স্টপেজ আলাদা থাকবে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা করানো যাবে না। এরসঙ্গে ট্রাভেল কার্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে করে যাত্রী কার্ড রিচার্জ করে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। সুপারিশ অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে। এতে করে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে বা কোনো অপরাধ করলে তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। পথচারী পারাপারে রোডে জেব্রাক্রসিং থাকবে। এ ছাড়া নতুন কিছু বিআরটিএর ডবল ডেকার নামানোর সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতেকরে কম গাড়িতে বেশি যাত্রী পরিবহন           করা যাবে। এর পাশাপাশি প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কমাতে মানুষকে গণপরিবহনে যাতায়াতে উৎসাহিত করা হবে। এদিকে এ পর্যন্ত তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সিটিং সার্ভিসের। সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রী সেবা কমিটি জানিয়েছে, তারা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন। প্রসঙ্গত, বিআরটিএর পরিচালক শেখ মাহবুব ই রব্বানীকে প্রধান করে বিভিন্ন পেশাজীবীর সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটির সদস্য সংখ্যা আট। এ কমিটি গত ৩ আগস্টে কমিটি মিটিংয়ে গণপরিবহনের নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং সিটিং সার্ভিস ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ১০টি সুপারিশ করে।

গলাকাটা ভাড়া : রাজধানীর নর্দা বাজার থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার না হলেও এর জন্য যাত্রীদের গুনতে হয় ২৫ টাকা ভাড়া। মিরপুরের কালশী সড়কের মাটিকাটা অংশে ইসিবি চত্বর থেকে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পথটুকুর সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা পাঁচ টাকা। অথচ গণপরিবহনগুলো ভাড়া আদায় করছে ২৫ টাকা। সিটিং সার্ভিসের নামে এভাবেই যাত্রীদের কাছে থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা। জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিটিং সার্ভিস বন্ধের নির্দেশনা দিলে বাস মালিক-শ্রমিকরা রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সিটিং সার্ভিস চলাচলের অনুমতি দিয়ে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সিটিং সার্ভিস বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত জুলাই মাসে মেয়াদ পার হলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। পরবর্তীতে আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ জানানো হয়, ঈদের পরে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য রুট আছে ১২২টি। ১১৬ দশমিক ৮ বর্গমাইল আয়তনের রাজধানীতে বাস করে প্রায় দুই কোটি মানুষ। আর মানুষের যাতায়াতের জন্য গণপরিবহন আছে প্রায় পাঁচ হাজার। তাই জনসংখ্যার তুলনায় রুট ও গণপরিবহন কম থাকায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ। সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তির সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন গণপরিবহন কোম্পানি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর