বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবসর ও কল্যাণের টাকা না পেয়ে ভোগান্তি ৬৮ হাজার শিক্ষকের

বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

আকতারুজ্জামান

দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে দুর্দশায় দিন কাটছে ৬৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর। শেষ বয়সে এসে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা না পেয়ে অনেকের দিন কাটছে নানা সমস্যায়। অর্থাভাবে কারও কারও মিলছে না চিকিৎসাও। দিনের পর দিন এই টাকার জন্য ঘুরছেন রাজধানীর পলাশীতে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে।

শিক্ষকদের এমপিওর ২ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে। আর ৪ শতাংশ কেটে রাখা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে। এ তহবিলে সরকার একটি অংশ বরাদ্দ দেয়। এ টাকাই অবসরের পর পান শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ অর্থের জন্য আবেদন করলেও তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে চার থেকে ছয় বছর পর। শিক্ষকদের অনেকেই মারা গেছেন অবসর ও কল্যাণের অর্থ না পেয়েই। গতকাল ব্যানবেইস ভবনে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের দুর্দশার চিত্র।

গাইবান্ধার গাছাবাড়ি পূর্বপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি প্রধান ছিলেন আনছারুজ্জামান। চাকরিরত অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা চেয়ে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত পাননি। আনছারুজ্জামানের সন্তান রাশেদুননবী বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে করতে হচ্ছে ধারদেনা। বোনকেও বিয়ে দিয়েছেন ঋণের টাকায়। রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় পিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মচারী আবদুল মালেক খান দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে গত বছর অক্টোবরে কল্যাণ ও অবসর সুবিধার জন্য আবেদন (সিরিয়াল-১০৬৯৭০) করেন। মুক্তিযোদ্ধা এই কর্মচারী চাকরি জীবন শেষে এখন নানা রোগে আক্রান্ত। গতকাল ব্যানবেইসে তার স্ত্রী রাশেদা বেগম জানান, দিনের পর দিন অবসর সুবিধা বোর্ডে এসেও কোনো সমাধান মিলছে না তার। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ সুবিধার আবেদন জমা রয়েছে। আর প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক অবসর সুবিধার অর্থের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ ও অবসর সুবিধার টাকা না পাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, সর্বশেষ স্কেলেই তাদের এ টাকা প্রদান করতে হয়। কিন্তু ফান্ডে প্রয়োজনীয় টাকা নেই। পে-স্কেল কার্যকরের আগে ২০১৫ সালের জুনে অবসরে যাওয়া একজন অধ্যক্ষ কল্যাণ ও অবসর মিলে পাবেন সাড়ে ২২ লাখ টাকার মতো। কিন্তু পে-স্কেল ঘোষণার পর একই সালের জুলাইয়ে অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে কল্যাণ ও অবসর সুবিধা বাবদ দিতে হচ্ছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। অবসর ও কল্যাণে আবেদন করা ৬৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর সমস্যা সমাধানে মোট তিন হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থে সরকারকে এ খাতে আরও বরাদ্দ দিতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষক-কর্মচারীদের পাঁচ শতাংশ উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা দেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে অবসর সুবিধা বোর্ডে ১০০ কোটি ও কল্যাণে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয় সরকার। এ ছাড়া পাঁচশ কোটি টাকা সিড মানি দিয়েছে এ খাতে। এবারের বাজেটে অবসর সুবিধা বোর্ডে ১৫০ কোটি ও কল্যাণ তহবিলে ৫০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জাতীয় পে-স্কেল যোগ হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের কল্যাণ ও অবসরের ভাতাও দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে। এতে বেড়েছে বিপত্তি। সমস্যা সমাধানে শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কল্যাণ ও অবসরের চাঁদার টাকা ছয় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দশ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার গেজেট প্রকাশ করেছিল। কিন্তু শিক্ষকরা তা মেনে নেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর