বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সিঙ্গাপুরে নাশকতা

পাঁচ ‘জঙ্গি’র বিষয়ে তথ্য নেই পুলিশের কাছে

মাহবুব মমতাজী

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো পাঁচ ‘জঙ্গি’র বিষয়ে কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আমাদের হাতে তথ্যপ্রমাণ নেই। মূলত কী কারণে এবং কোন ঘটনার জন্য তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে- তার যথাযথ প্রমাণ দরকার।

সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে নাশকতা করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পাঁচজনকে দেশে ফেরত পাঠায় সে দেশের সরকার। তাদের আটকের পর তিনটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে দুটির চার্জশিট সম্পন্ন হয়েছে। বাকি মামলার তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর আগে সিঙ্গাপুরের ঘটনার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পেতে সে দেশে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের প্রতিনিধিদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য গত এপ্রিলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল প্রক্রিয়া শুরু হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ এখনো আমাদের হাতে নেই। মূলত কী কারণে এবং কোন ঘটনার জন্য তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয় তার যথাযথ প্রমাণ দরকার। সেগুলো সংগ্রহের জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ফাইল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সেটি হয়ে গেলেই পুলিশের লোক যাবে। কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আবদুল মান্নান এ প্রতিবেদককে জানান, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দুটি মামলার চার্জশিট এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাটিরও দেওয়া হবে। ওই মামলা তদন্তে আমাদের সিঙ্গাপুর যাওয়ার বিষয়টি এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, গত বছর এপ্রিলে নাশকতা করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৩ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করে সিঙ্গাপুর সরকার। এদের মধ্যে আটজনকে আটক রেখে পাঁচজনকে দেশে ফেরত পাঠায়। দেশে ফেরত আসা মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), রাহা মিয়া পাইলট (২৯), আলমগীর হোসেন (২৯), তানজীমুল ইসলাম (২৪) ও মাসুদ রানা ওরফে সল্লু খানকে (৩১) ওই বছরের ৩ মে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে রামপুরা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাদের প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চান সে সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মনসুর আলী। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলী মাসুদ শেখ সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে এটিসহ মোট তিনটি মামলা সিসিটিসি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীসহ ১৩ ধরনের পেশাজীবীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল। জঙ্গি গ্রেফতারের পরই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, হত্যাসহ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৮ এপ্রিল পাঁচ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে মামলায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তাতে এবিটির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকার বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। আরও জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেও সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সন্দেহভাজন ২৭ বাংলাদেশি আটক হয়েছিল। সর্বশেষ আটক মিজানুর রহমান (৩১), লিয়াকত আলী মামুন (২৯), সোহাগ ইব্রাহিম (২৭), রুবেল মিয়া (২৬), দৌলতুজ্জামান (৩৪), শরিফুল ইসলাম (২৭), জাবেদ কায়সার হাজী নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯) নির্ধারিত এস-ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের ভিত্তিতে অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে মিজানুর রহমান সিঙ্গাপুরে গত বছরের মার্চে ‘ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি)’ নামে গোপন একটি সংগঠন তৈরি করেন। বাকিরা তার সদস্য হিসেবে যোগ দেন। তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খেলাফত কায়েমের পরিকল্পনা করেন। আর মিজানুর রহমানের কাছে পাওয়া ‘আমাদের জিহাদ প্রয়োজন’ শীর্ষক একটি দলিলে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা ধরে তাদের আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল। তারা সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে সদস্য সংগ্রহ করছিলেন। সেই সঙ্গে দেশে ফিরে হামলা চালানোর লক্ষ্যে অস্ত্র কেনার জন্যও টাকা জোগাড় করছিলেন। সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসব অর্থ জব্দ করে। আটকের পর মিজানুর তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, আইএসের নির্দেশ পেলে তিনি দেশের যে কোনো জায়গায় হামলা চালাতেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর