শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
অদম্য

স্বপ্নের পথে এগোতে চান সেই খাদিজা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

স্বপ্নের পথে এগোতে চান সেই খাদিজা

খাদিজা বেগম নার্গিস। মৃত্যুঞ্জয়ী কলেজছাত্রী। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল তার শরীর। বেঁচে থাকার আশা ছিল ক্ষীণ। চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আর সাধারণ মানুষের দোয়ায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন খাদিজা। সেই সঙ্গে স্বপ্নগুলোও জেগে উঠছে। খাদিজা ফিরতে চান প্রিয় ক্যাম্পাস সরকারি মহিলা কলেজে। পড়ালেখা শেষ করে স্বপ্ন পূরণে হতে চান ব্যাংকার। পেশা হিসেবে ব্যাংকিং তার পছন্দ। পাশাপাশি সারা জীবন কাজ করতে চান নির্যাতিতা নারীদের জন্য। বদরুল নামের পাষণ্ডের বর্বরোচিত হামলায় খাদিজার শরীরের শক্তি কমলেও বাড়িয়ে দিয়েছে মনের জোর। সেই মনোবল নিয়েই তিনি পূরণ করতে চান তার স্বপ্নগুলো। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের স্বপ্নের কথাগুলো জানিয়েছেন খাদিজা। বলেছেন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের হামলার শিকার হন সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক পরীক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিস। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে বদরুল। প্রথমে ওসমানী মেডিকেল ও পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সর্বশেষ সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা শেষে সিলেটের বাড়িতে ফেরেন তিনি। হামলায় আহত হওয়ার সময় খাদিজা ছিলেন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। আহত হওয়ার কারণে সবকটি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। কিন্তু এতেই দমে যেতে চান না খাদিজা। সুস্থ হয়েই ফিরতে চান সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের প্রিয় ক্যাম্পাসে।

খাদিজা জানান, আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থা এখন অনেক ভালো। তবে মাঝেমধ্যে হাতে ও মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তখন হাঁটাচলা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। বাম হাতে এখনো একটি অস্ত্রোপচার বাকি আছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেটি করা হবে। এরপর সুস্থ হয়ে উঠলেই তিনি আবার শুরু করতে চান পড়ালেখা। নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে খাদিজা বলেন, তার একটি স্বপ্ন আছে। সে স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে চান। ব্যাংকার হতে চান তিনি। প্রতিষ্ঠিত হতে চান নিজের পায়ে। সেই আত্মনির্ভরশীলতাই তাকে নির্যাতিতা নারীদের পথিকৃৎ করে তুলবে বলে মনে করেন। তবে শুধু ব্যাংকার হিসেবেই জীবন কাটাতে চান না। কাজ করতে চান নির্যাতিতা নারীদের জন্য। খাদিজা বলেন, ‘আমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। আমি চাই না আমার মতো আর কোনো নারী হামলার শিকার হন। আমি নারীদের সাহস জোগাতে চাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেন তারা প্রতিবাদ করতে পারে। ভয় পেলে চলবে না, নারীদের উচিত সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। নীরবে অন্যায় সহ্য না করে তাদের প্রতিবাদী হতে হবে। আমি সারা জীবন নারী অধিকার নিয়েই কাজ করতে চাই।’

সর্বশেষ খবর