শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
চ্যালেঞ্জে সিলেটের দুই নেতা

ঘরে বাইরে সংকট নিয়েই কামরানের এগিয়ে চলা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঘরে বাইরে সংকট নিয়েই কামরানের এগিয়ে চলা

দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিসিকে নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপও। ঘরে-বাইরের নানা সংকট ঘিরে ধরছে আওয়ামী লীগ দলীয় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে তার নিজের দল থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেও ফাঁকা মাঠ পাচ্ছেন না কামরান।

দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তার সঙ্গে মাঠে রয়েছেন আরও দুই নেতা। এর বাইরে অর্থমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট প্রভাবশালী একজনও আছেন মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে। এ ছাড়া বিরোধী পক্ষে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও কামরানের জন্য ‘গলার কাঁটা’। এসবের বাইরে সাবেক সিটি মেয়র কামরানের জন্য আরেক সংকট হচ্ছে, নিজ দলের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি শক্তিশালী বলয়। সিসিকের আগামী নির্বাচন ঘিরে এই বলয়টি ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে। এসব সংকট নিয়ে আগামী নির্বাচনে বৈতরণী পার হওয়া কামরানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নগরবাসী। সিসিকের সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে মেয়র পদে হেরে যান বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। নির্বাচনে হারলেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন কামরান। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শেষে আগামী সিটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং মানুষের কাছে যেতে নির্দেশ দেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের জন্য এমন ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে উত্ফুল্ল কামরান নতুন উদ্যমে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে কামরান সক্রিয় হতেই আগামী নির্বাচনের জন্য মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন দলেরই দুই নেতা। অবশ্য এ দুই নেতা, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এবং শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ দীর্ঘদিন ধরেই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেটের রাজনীতিতে পরিচিত। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডও বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। সাবেক এই ছাত্রনেতা গ্রুপিং রাজনীতিতে কখনই নিজেকে জড়াননি। তবে আগামী সিসিক নির্বাচন সামনে রেখে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন তিনি। সিটির গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মীই কামরানের বিপক্ষে কাজ করলেও আদাজল খেয়ে মাঠে ছিলেন সিটি কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। কাউন্সিলর পদে নিজের প্রচারণা বাদ দিয়ে মেয়র প্রার্থী কামরানের জন্য রাতদিন খাটেন তিনি। ওই নির্বাচনে কামরানের ভরাডুবি ঘটলেও আজাদের নিজের ওয়ার্ডে সবকটি কেন্দ্রেই জয়ী হন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের পর বিভিন্ন কারণে আজাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে কামরানের। মূলত গত নির্বাচনের পর থেকেই মেয়র পদে নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে সক্রিয় আজাদ। নিজ দলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমও আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আশীর্বাদপুষ্ট সেলিম আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে সিসিকের আগামী নির্বাচনে এ দলটির মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে তত্পর। সিসিকের গত নির্বাচনে কামরানের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এর জেরে নির্বাচনে বেশির ভাগ ভোট কেন্দ্রেই কামরানের পক্ষে কোনো এজেন্ট ছিল না। আগামী নির্বাচনেও কামরানের জন্য অস্বস্তির কারণ এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কামরান যদি এবার দলীয় মনোনয়ন পান, তবে গতবার দলের যে বলয়টি তার বিপক্ষে কাজ করেছিল, সেই বলয়টি এবারও চাইবে তিনি নির্বাচনে হেরে যান। এতে কামরানের নির্বাচনী রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। এ লক্ষ্যেই একটি বলয় আগেভাগেই ‘কামরান বিরোধিতায়’ নেমেছে। ঘরের এসব সংকট ছাড়াও বাইরের সংকটও মোকাবিলা করতে হচ্ছে কামরানকে। বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর উন্নয়নে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন, এগুলো প্রশংসিতও হয়েছে সর্বমহলে। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দুই বছর কারাবাস আরিফের জন্য ‘শাপেবর’ হয়ে দেখা দিয়েছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমি নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। মানুষও আমাকে কথা দিচ্ছেন। আমি আশাবাদী, দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে।’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এখনই কামরানের দলীয় ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে ক্লিন ইমেজ রক্ষা করে চলেছি। নগরবাসী আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাইছে।’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘আমি টানা তিনবারের সিটি কাউন্সিলর। নগরবাসীর সেবা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করার পর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর