শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বিমানবন্দর স্থাপন হয়নি মানব স্ক্যানার

রুহুল আমিন রাসেল

মানবদেহের ভিতর বিস্ফোরক বহনের আশঙ্কা থেকে দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭টি মানব স্ক্যানার বসানোর উদ্যোগ গত এক বছরেও কার্যকর হয়নি। ফলে, ঢাকার হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমন ও বহির্গমন পথে নিরাপত্তা ঝুঁকি রোধ করা যাচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআর এ নিয়ে গবেষণা করছে। একাধিক বৈঠক হলেও, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বসানো হয়নি মানব স্ক্যানিং ডিভাইস। জানা গেছে, দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হরহামেশাই ধরা পড়ছে অবৈধভাবে আসা সোনা, সিগারেট, মুদ্রা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। মানুষের শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং অভ্যন্তরে লুকিয়ে আনা অবৈধ পণ্য উদ্ধারও হচ্ছে। এমনকি যাত্রীদের পাকস্থলীর ভিতরে আনা সোনা কিংবা পোঁটলা থেকে ইয়াবাও উদ্ধার হয়েছে। এ সব ঘটনা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিস্ফোরক বহনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন গোয়েন্দারা। এমন প্রেক্ষাপটে বিমানবন্দরগুলোতে ৭ সেট মানব স্ক্যানিং ডিভাইস বা মানব স্ক্যানার বসানোর প্রস্তাব এনবিআরে পাঠায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়ে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে পত্র দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। এনবিআর বিষয়টির গভীর গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্য সব প্রক্রিয়া শেষ করে চলতি বছর জুন মাসের মধ্যেই দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানোর কথা ছিল— প্রায় ২০ কোটি টাকা দামের এই মানব স্ক্যানিং ডিভাইস।

বিমান বন্দরগুলোতে মানব স্ক্যানার বসানোর অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানব স্ক্যানার বসাতে এনবিআর একটি কমিটি গঠন করেছে। সে কমিটি কয়েকটি বৈঠক করেছে। এই বৈঠকগুলোতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধিও আসেনি। এখন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ আরেকটি কমিটি গঠন করবে, এটাই অগ্রগতি বলে মনে করেন শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি। শুল্ক গোয়েন্দারা মনে করেন, পেটের ভিতরে যদি ইয়াবার পোঁটলা বহন করতে পারে, তাহলে বিস্ফোরকও বহন করতে পারে। এর ঝুঁকি আছে। সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা তো যে কোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারে। নিশ্চয়ই এমন কোনো উদাহরণ আছে। নইলে এমন প্রযুক্তি আসত না।

অনেক আশঙ্কা ও ঝুঁকি সামনে রেখে এই প্রযুক্তি এসেছে। বিশ্বের অধিকাংশ বিমানবন্দরে এই মানব স্ক্যানার আছে। যারা সূক্ষ্মভাবে চোরাচালান করে, তাদের ধরা হবে মানব স্ক্যানিং ডিভাইস ব্যবহার করে। যাত্রীরা তাদের অজান্তে স্ক্যানিং হবেন। অনেক ক্ষেত্রে ভিআইপি যাত্রীরা সুবিধা নিয়ে অপব্যবহার করেন, এই ডিভাইসে সেটা সম্ভব হবে না। তাদের দাবি, এই মানব স্ক্যানিং ডিভাইসে মানুষের শরীরের গোপন অংশের কিছু দেখা বা বোঝা যাবে না। তবে লুকায়িত কিছু থাকলে ধরা পড়বেই। আর যেহেতু গোপনাঙ্গ দেখা যাবে না, তাই এটা মানবাধিকারের বিষয় নয়। আর দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে।

 গত বছর ১৮ আগস্ট এনবিআরে পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দার ওই পত্রে বলা হয়, উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মানব স্ক্যানিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। একইভাবে বাংলাদেশের বিমান বন্দরগুলোতেও আগমনী ও বহির্গমন পথে এই মানব স্ক্যানিং ডিভাইস স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। দেশের বিমানবন্দরগুলো নিয়ে এক শ্রেণির দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও সংস্থার উদ্বেগ এবং উত্কণ্ঠা প্রকাশের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ সব উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ না থাকলেও আরও সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ওইপত্রে মানব স্ক্যানার প্রসঙ্গে আরও বলা হয়, এই ডিভাইস যাত্রী সাধারণের অগোচরে অনুরূপ রেডিয়েশন ছাড়াই বহন করা যে কোনো পণ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ডিভাইসের আরেকটি সুবিধা হলো, ক্ষতিকর পদার্থের সূক্ষ্ম ছবি তৈরি করে তা প্রদর্শন করতে সক্ষম। এই ডিভাইস স্থাপনের ফলে বিমানবন্দরগুলোতে অবৈধ পণ্যের পাচার রোধসহ যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তার স্বস্তি বয়ে আনবে বলে মনে করে শুল্ক গোয়েন্দা।

সর্বশেষ খবর