সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেয়র নাছির দশ চ্যালেঞ্জে

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

মেয়র নাছির দশ চ্যালেঞ্জে

১০ চ্যালেঞ্জে আছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সামনে এগোতে চাইলেই যেন তাকে পিছু টানে নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা। লোকের প্রশংসা এবং সমালোচনা— দুটোই যেন নিত্যসঙ্গী এই আওয়ামী লীগ নেতার। বিলবোর্ড উচ্ছেদে নজিরবিহীন সাফল্যের পর পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে ‘ডোর টু ডোর’ কার্যক্রম যখন বিশেষ মাত্রায় তখনই যেন বিষফোঁড়া হয়ে এসেছে জলাবদ্ধতা ইস্যু ও হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর বিতর্ক। সমস্যা-সংকট পিছু ছাড়ছে না চট্টল মেয়রের।

তবুও অদম্য মেয়র নাছির বললেন, ঘুরে দাঁড়াতে হলে লড়তে হবে। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হয়। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হলেও মেয়র নাছিরের বিরুদ্ধে খোদ তার সংগঠনের সভাপতি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রকাশ্য বিরোধিতায় সরব। মেয়র হওয়ার পর গেল দুই বছরে দফায় দফায় প্রকাশ্যে আসে এ দুই নেতার দ্বন্দ্বের কথা। জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সাবেক মেয়র যেন অভিযোগের বানে এক হাত নেন বর্তমান মেয়রের।

জলাবদ্ধতা ইস্যুতে সম্প্রতি  ব্যাপক আলোচনার ঢেউ উঠলেও অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে একটি মেগা প্রকল্পের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে যেন দায় মুক্তি ঘটেছে চসিকের। ফলে এ ব্যাপারে নিকট ভবিষ্যতে আর হয়তো সমালোচনায় ব্যক্তি আক্রমণ কিংবা চসিককে একক দায়বদ্ধতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হলেও এখনো অন্তত ১০টি বিশেষ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে মেয়র নাছিরকে— এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে কী রয়েছে এ শীর্ষ ১০ চ্যালেঞ্জে?— এমন প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি খোদ নিজ দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতাসহ অন্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে মেয়র নাছিরকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তী বছরগুলোয় চসিকের ভেঙে পড়া চেইন অব কমান্ড পুনঃস্থাপন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের আগ্রাসন মোকাবিলা, অর্গানোগ্রামহীন জনবল সংকটের দুরবস্থা রোধ, আর্থিক অসচ্ছলতা ও বকেয়া পরিশোধ এবং এর বিপরীতে কর আদায়সহ আয়ের উৎস বের করা, অস্থায়ী নিয়োগের ধকল রোধ ও দক্ষ জনবলের অভাব পূরণ, সিটি করপোরেশন অ্যাক্টের আওতাবহির্ভূত সেবা কার্যক্রমে ভর্তুকি, জনসচেতনতার অভাব, জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাব মোকাবিলা মেয়র নাছিরের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ। আর তিনি তা স্বীকারও করলেন অকপটে। জলাবদ্ধতা সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বছরের পর বছর চট্টগ্রাম শহরের খাল-নালা দখল, ভরাট হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ভরাট হয়েছে পুকুর, মাঠ, বিলসহ নানা জলাশয়। তার ওপর গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত জনসচেতনতা। যে নগরবাসী পানিবন্দী দশায় দুর্ভোগে পড়েন, সেই নাগরিকরাই আবার অপরিণামদর্শীভাবে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে খাল-নালা ভরাট করছেন। ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে ক্রমশ জলদুর্ভোগ বাড়ছে। এক্ষেত্রে তাই জলাবদ্ধতা দূর আর জনসচেতনতার অভাব মোচন করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা প্রধানতম সমস্যা বলে মনে করছেন খোদ মেয়রই। পরিকল্পনাহীন বেড়ে ওঠা শহরে যা কিছু ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে বর্তমান অবস্থা থেকেই সুন্দর পরিচ্ছন্ন জনবান্ধব শহর গড়তে চান মেয়র নাছির। আর এ ক্ষেত্রে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ‘সাপোর্ট’ পাচ্ছে না চসিক। এমনই বাস্তবতা শুধু বিশ্লেষকদের ভাষাতেই নয়, দৃশ্যমানও। যেমন— চসিকের প্রায় সব বিভাগের বিভাগীয় প্রধানই ‘ভারপ্রাপ্ত’। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পর্যাপ্ত ইক্যুইপমেন্ট এবং লোকবল নেই। প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা কোনো বিভাগেই নেই পর্যাপ্ত লোকবল। প্রায় সব বিভাগে লোকবলের এ চরম সংকট জিইয়ে আছে ১৯৮৮ সালে প্রস্তাবিত ‘অর্গানোগ্রাম’ পাস না হওয়ায়। পর্যাপ্ত স্থায়ী লোকবল নেই বলেই গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও। ফলে গৃহকর আদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে মানুষের যেই নিরঙ্কুশ প্রত্যাশা সে অনুযায়ী সরকারি সহযোগিতা না থাকায় বিষয়টি নগরীর মুখ থেকে মুখে আলোচিত। এদিকে অর্থের অপ্রতুলতার কথা তো স্বীকারই করলেন খোদ মেয়র। তিনি জানালেন, প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতেই বছরে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা দরকার। অথচ রাজস্ব আদায় মাত্র শত কোটির একটু বেশি। তার ওপর পুরনো বকেয়া পড়ে আছে ৩০০ কোটি টাকা। প্রায় দুই বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাবেক মেয়রদের আমলের ১০০ কোটি টাকা বকেয়াও পরিশোধ করতে হয়েছে বর্তমান মেয়রকে। বিল না পাওয়ার আশঙ্কায় ঠিকাদারদের অনেকেই এখন কাজও করতে চান না বলে জানান মেয়র। এদিকে সিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী যে দায়িত্বে এখতিয়ার রয়েছে তার বাইরে বিগত দিন থেকে চলে আসা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ভর্তুকির বাড়তি চাপ মোকাবিলায়ও হিমশিম খেতে হচ্ছে। চসিক নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাভাবে নিয়োগসহ নানান ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমপিওভুক্তির জটিলতায় আটকে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা। এমন সব সংকট থাকা সত্ত্বেও খোদ নিজের দল আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রকাশ্য বিরোধিতাও মোকাবিলার এক কঠিন চ্যালেঞ্জে এখন মেয়র নাছির।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর