সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলাদলি, একাধিক প্রার্থী

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলাদলি, একাধিক প্রার্থী

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর পাশাপাশি দুই জোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থীরাও বসে নেই। তবে এ আসনে প্রধান দুই দলে দলাদলি রয়েছে। সভা-সমাবেশসহ সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিতি ছাড়াও গত দুই ঈদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূজাকেও কাজে লাগিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নির্মাণের মাধ্যমে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছে তারা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনটি বরাবরই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বেশির ভাগ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে এ আসনে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন  থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত এ কে এম শাহজাহান কামাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী নির্বাচিত হন। এ আসনটিতে মূলত বিএনপি-জামায়াতের ভোটার বেশি থাকায় প্রথম সংসদ ছাড়া কখনো আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেননি। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মাস্টার সফিক উল্যাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সংসদীয় আসনে মূলত আওয়ামী লীগ, বিএনপির মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তবে বতর্মানে এ দুই দলেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় একাধিক প্রার্থী নানা বলয়ে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। শরিক দলগুলোও ছাড় না দেওয়ার পথে হাঁটছেন বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থাকছেন। তবে তাকে ছাড় দিতে রাজি নন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু। এলাকায় নানাভাবে সম্পৃক্ত হওয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও এ নেতা যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা যায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়া সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এম এ হাসেম সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ ছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কর্মসূচিতে অনুদান দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী আসনটি পুনরুদ্ধার করতে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও দলীয় সমাবেশসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু তাকে ছাড় দিতে রাজি নন। মনোনয়ন পেতে তিনি স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নিজ নিজ সমর্থকরা পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত সাবু সমর্থকরা তাদের নেতার পক্ষে অনড় অবস্থানে আছেন। তাদের মতে, এ্যানী চৌধুরী কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি রাজধানীতে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করাটাই তার জন্য ভালো হবে। অপর দিকে, এ্যানী সমর্থকদের মতে, এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে এ্যানীর নাড়ির সম্পর্ক। তিনি এখানকার মানুষের সুখ, দুঃখের সঙ্গী। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমানে উত্তরা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এইচ এম বেলায়েতও মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে বায়োফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল আজিমকে মনোনীত করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এম আর মাসুদ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ নানাভাবে তৎপর রয়েছেন। জেএসডির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল এবং ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি অনারারি ক্যাপ্টেন (অব.) মো. ইব্রাহীমও নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর