সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসির সঙ্গে সংলাপ জাসদ ও জেএসডির আজ বসবে জাতীয় পার্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে গতকাল সংলাপে অংশ নিয়েছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং আ স ম আব্দুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। অন্যদিকে আজ জাতীয় পার্টি সংলাপে অংশ নেবে।

নতুন করে আদমশুমারি প্রতিবেদন না হওয়ায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে দশম সংসদীয় আসনের সীমানা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। গতকাল বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দলটি ১৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ইসির সংলাপে অংশ নেয়। ভোটে ইভিএম ব্যবহার, অনলাইনে মনোনয়ন, প্রচারে দলকে অনুদান, জামায়াতের কেউ যেন ব্যক্তিগত ও জোটগতভাবে ভোটে অংশ নিতে না পারেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১% সমর্থন বিষয় বাতিলসহ সংলাপে ১৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে জাসদ। এ ছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার  ইসির কাছে একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। সভা শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘নির্বাচন পদ্ধতিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য ইভিএম চালু করা দরকার। সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ করতে হলফনামা বাতিলের কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এ জন্য যা যা করার দরকার তা ইসি করবে। আর সরকারকেও এতে সহযোহিতা করতে হবে। নতুন আদমশুমারি যেহেতু হয়নি, সে জন্য আগের (দশম সংসদের) সীমানা বহাল রাখার কথা বলেছি।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘সব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। আমি সব সময় আশাবাদী নিবন্ধিত সব দল নির্বাচনে আসবে। এ ছাড়া নির্বাচন বর্জন, আগুনযুদ্ধ বা অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ইচ্ছা থেকে তারা বেরিয়ে আসবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান বর্ণিত আর যেভাবে আইনে আছে সেইভাবেই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই। তবে ইসি চাইলে সরকার পাঠাতে পারে। তিনি বলেন, ‘কমিশনের বাইরে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর জঙ্গি দমনের যুদ্ধের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করার পক্ষে।’ জাসদ বলেছে, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি আদমশুমারির সঙ্গে সংযুক্ত। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নতুনভাবে কোনো আদমশুমারি হচ্ছে না। তাই দশম সংসদের আসন বহাল রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচন করার কথা বলেছে দলটি। এ ছাড়া দলছুট সংসদ সদস্যদের (জাসদের) নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য কোনো নামে নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও সুপারিশ রয়েছে। কারও নামোল্লেখ না করে জাসদ একটি প্রস্তাব হচ্ছে—একটি নিবন্ধিত দলের থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য অনিবন্ধিত দলে যোগদান করলে তা ওই অনিবন্ধিত দলকে নিবন্ধনের জন্য কোয়ালিফাই করবে না বলে বিধান যোগ করতে হবে। এ ছাড়া নতুনভাবে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা কাছাকাছি নামে কানো দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার অনুরোধ করেছে দলটি। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর অনেকে বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে ভোটের পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছে জাসদ। জাসদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে—নিবন্ধিত দলকে ব্যয় নির্বাহে ও প্রচারণায় নিয়মিত অনুদান, সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ইভিএম ব্যবহার, দলের অনুদান আয়কর মুক্ত করা, অনলাইনে মনোনয়নের ব্যবস্থা, ভোটে কালো টাকার ব্যবহার রোধে প্রার্থিতা বাতিল, স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১% ভোটারের সমর্থন তালিকার শর্ত বাতিল, জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা, পাবলিক ও বেসরকারি থেকে অবসরের পর ভোটে অংশ নেওয়ার শর্ত শিথিল করা, প্রতীক বরাদ্দের দিনই জোটভুক্তদের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ রাখা এবং নির্বাচন আর্কাইভ স্থাপন করতে হবে।

ইসিতে ১৪ দফা আ স ম রবের : ইসির সঙ্গে সংলাপে বসে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ১৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এই সঙ্গে তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে। সংলাপে নেতৃত্ব দেন দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব। গতকাল সকালে নির্বাচন ভবনে রবের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের আ স ম রব বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংলাপে ইসির কাছে ১৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলে রাষ্ট্র বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এমনিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা সংকটে পড়ে গেছি। ভোটারবিহীন নির্বাচন সে সংকটকে আরও উসকে দেবে। লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যাতে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সূচি ভণ্ডুল না হতে পারে— সেজন্য একদিকে সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও অন্যদিকে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার স্বার্থে উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের কূটনীতি  জোরদার করতে হবে। এর জন্য ইসিও সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারে। সংলাপে জেএসডির লিখিত প্রস্তাব দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন উপস্থাপন করেন। জেএসডির অন্য দাবিগুলো হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, ইসির স্বাধীন ভূমিকা নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া, না ভোটের বিধান চালু করা, তিন মাস আগে মামলা নিষ্পত্তি করা, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, সব ভোটারকে এনআইডি কার্ড সরবরাহ করা, দলের অঙ্গ সংগঠন না থাকার বিধান কার্যকর করা, সব প্রার্থীকে এক মঞ্চে প্রচারণার ব্যবস্থা করা।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী চাইবে জাতীয় পার্টি : আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন চাইবে জাতীয় পার্টি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের পক্ষ থেকে এ দাবি তোলা হবে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁও  নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেবেন দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে জাতীয় পার্টি  আটটি প্রস্তাব দেবে। অবাধ ও সুষুম ?নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার পক্ষে দলটি। তারা সংবিধান অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাবও করবে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করে দলীয় মহাসচিব এ বি এম রহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চাই দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সেনাশাসন চাইব। নির্বাচনের কমপক্ষে সাতদিন আগে সেনা মোতায়েন করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।  জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, দলের আটটি প্রস্তাবের মধ্যে অন্যগুলো হলো, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ না করা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের আনুপাতিকহারে সদস্য নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, দলীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রী নিয়োগ করা, তফসিল ঘোষণার পর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিতর্ির্কত কর্মকর্তাদের মাঠে না রাখা এবং  প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় আট লাখ করা। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি সংলাপে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাইবে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর