বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা থেকে মানসিক রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আর এর মধ্যে কর্মজীবীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর ফলে প্রতিবছর বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার উৎপাদনশীলতা কমছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সমসাময়িক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। কর্মজীবীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতার কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কর্মজীবীরা। কর্মজীবীদের মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বেশ কিছু উপাদান। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ। সহকর্মীদের আচরণের ওপর কর্মজীবী মানুষের মানসিক প্রশান্তি নির্ভর করে। সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণ কর্মীকে এরপর পৃষ্ঠা মানসিকভাবে চাপে ফেলে। এ ছাড়া যে কাজে কর্মী দক্ষ তাকে সে বিষয়ে কাজ করতে না দিয়ে অন্য বিষয় ধরিয়ে দিলে কর্মীর কাজের গতি নষ্ট হয়ে মানসিকভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে ঘটতে থাকলে বিষণ্নতা থেকে মানসিক রোগ তৈরি হয়। আর কর্মীর কাজের গ্রাফ নিচের দিকে নামতে থাকে। এর পাশাপাশি শারীরিকভাবে দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং মাদক সেবনও কাজে মনোযোগ নষ্ট করে উৎপাদনশীলতা কমায়। এ ব্যাপারে এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার মেডিকেল সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, কর্মজীবী মানুষের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ জন্য তাদের মানসকি স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে কাজের ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নারী-পুরুষের সংখ্যা নির্ধারণ করে কর্মীদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন ডে-কেয়ার সেন্টার বা ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার। সহকর্মীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেও মানুষের মন ভালো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এখান থেকে তৈরি হচ্ছে অক্ষমতা। ২৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ উদ্বিগ্নতার সমস্যায় ভুগছেন। আর এখান থেকে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে (বিএইচআইএস), ২০১৬-এর তথ্য অনুসারে, দেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৬৬ দশমিক ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয় আঘাতজনিত কারণে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আত্মহত্যার ফলে। প্রতি এক লাখে ১৪ দশমিক ৭ জন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেন। জানা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। বয়সের কারণে তারা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। মানসিক আঘাত পেলে যুক্তির চেয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় তারা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘মেন্টাল হেলথ স্ট্যাটাস অব অ্যাডলসেন্টস ইন সাউথ-ইস্ট এশিয়া : এভিডেন্স ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এক বা একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ ছেলে ও ৬ শতাংশ মেয়ে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুনতাসীর মারুফ বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বাড়ছে। আর এর বড় কারণ বিষণ্নতা। অনেকে নিজেদের ইচ্ছায় ওষুধ খাওয়া শুরু করেন আবার অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বন্ধ করে দেন। এ সমস্যার সমাধানে নিজের প্রতি ইতিবাচক ধারণা রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।