বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্নীতি দমনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামে দুদক

১৫ সেবা সংস্থার দুর্নীতি প্রতিরোধে আজ শুরু কার্যক্রম

মোস্তফা কাজল

দুর্নীতি দমনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামে দুদক

আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা দুদকের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। এর অংশ হিসেবে দুদকে স্থাপিত হটলাইন সেবা ১০৬-এ অভিযোগ করা হলেই তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করবেন মহাপরিচালক (প্রশাসন ও সমন্বয়) মুনীর চৌধুরী।

দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, আপাতত সরকারি ১৫ সেবা সংস্থায় আজ থেকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু হবে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, হাসপাতাল, এজি, ভূমি, তিতাস, ওয়াসা ও বিদ্যুতের মতো সরকারি অফিস।

দুদক সূত্র জানায়, প্রতিদিন জমা পড়ছে নতুন নতুন অভিযোগ। এ কারণে গত ২৭ জুলাই দুদকে চালু করা হয় তিন ডিজিটের টেলিফোন হটলাইন-১০৬ সেবা। এতে ৮০ দিনে ফোন কলের মাধ্যমে ২ লাখ ১০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দুদকের জন্ম। মূলত লিখিত অভিযোগ ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ আমলে নিয়েই চলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম। অভিযোগ আমলে নিতে যোগ হয়েছে দুদক হটলাইন-১০৬। এ লাইনে প্রতিদিন কয়েক হাজার কল আসে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে। কিন্তু দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অনেক দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিতে পারছে না সংস্থাটি। এসব কারণে ওইসব অভিযোগের বিষয়ে দুদকের করণীয় থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধী ধরার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শুধু তফসিলের বিষয়ে জনসাধারণের স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় অধিকাংশ অভিযোগে দুদককে নীরব ভূমিকা পালন করার পরিবর্তে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। দুদক পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন বলেন, হটলাইন সেবা চালু হওয়ার পর অভিযোগ জানাতে গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ৭ হাজার ফোন কল এসেছে। এর মধ্যে আমলযোগ্য অভিযোগের সংখ্যা পাঁচশর কিছু বেশি। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এতদিন দুদকে দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ আসত। এখন হটলাইন-১০৬ সেবার মাধ্যমে মানুষ চাইলেই পয়সা ছাড়াই অভিযোগ করতে পারছেন। সাধারণ যে কোনো ব্যক্তি দুদকের হটলাইনে চালুর পর থেকে জন্ম নিবন্ধন, জমি, কাবিখা ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি অভিযোগ করতে পারছেন। দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, সবার আগে নজর দিতে হবে কোন কোন অভিযোগ দুদকের তফসিলভুক্ত। এরপর যিনি অভিযোগ করছেন, তার পরিচয়, নাম-ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর যথার্থ কি না, এসব যাচাইয়ের পাশাপাশি অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ কি না— ইত্যাদি দেখার বিষয়। তফসিলবহির্ভূত অপরাধ বিষয়ে ঢালাও অভিযোগ আসার কারণে দুদককেও মাঝে মধ্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ ছাড়া অভিযোগটি দুদক আইন-২০০৪ ও দুদক বিধিমালা-২০০৭ অনুসারে কাজ শেষে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা যাবে কি না, প্রমাণে কী পরিমাণ অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় ও উপকরণ প্রয়োজন হবে— এসবও বিবেচনা করতে হয়। তিনি বলেন, আসলে বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগ তত বেশি হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে তফসিলভুক্ত না হলেও আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি। তিনি উল্লেখ করেন, দুদকে অভিযোগ করার আগে জানতে হবে কোন কোন অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত। শত্রুতাবশত কিংবা অযথা হয়রানির উদ্দেশে অভিযোগটি দিয়েছে কি না এবং সবশেষে বিবেচিত যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার দফতর, দাফতরিক মর্যাদা, বর্ণিত অপরাধ করার ক্ষমতা ও সুযোগ আছে কি না— ইত্যাদি দেখার বিষয়। দুদক সূত্র জানায়, দুদকে কোন ধরনের অভিযোগ নেওয়া হয়, আর কীভাবে অভিযোগ করতে হয়— এসব জানা না থাকায় অনেকে ঠিকমতো অভিযোগ দিতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় তথ্যও দেন না অনেকে। তাই বাছাই পর্যায়ে বাতিল হয়ে যায় এসব অভিযোগ। এ ছাড়া কিছু কিছু অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে তাত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাক্ষ্য ও আলামত সংগ্রহ করতে হয়। এসব কারণে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে দুদক।

সর্বশেষ খবর