বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আকাশছোঁয়া স্বপ্নের ভবন

১৪২তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে শিগগিরই দরপত্র

মানিক মুনতাসির

আকাশছোঁয়া স্বপ্নের ভবন

রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলে স্বপ্নের ১৪২তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগিয়েছে। আকাশচুম্বী এই ভবন নির্মাণের জন্য জমি চেয়ে আন্তর্জাতিক নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ২০ জুলাই থেকে নিলাম ডকুমেন্ট বিক্রি শুরু হয়েছে। স্বপ্নের এই ভবন নির্মাণে যোগ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে শিগগিরই আন্তর্জাতিক ওপেন টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। এদিকে আকাশছোঁয়া এই ভবন নির্মাণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান কেপিসির কর্ণধার (চেয়ারম্যান) যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি কালিপ্রদীপ চৌধুরী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত এই আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের অংশীদার হতে চাই।’ যদিও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজউক চায় না কেপিসির মাধ্যমে এ ভবন নির্মিত হোক। আন্তর্জাতিক ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে পূর্বাচলে ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে এবং কেপিসি গ্রুপকে এককভাবে বাছাইয়ের পরিবর্তে একটি টেন্ডার ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য অবিচ্ছিন্ন দরপত্রের অধিকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজউকের আহ্বান করা দরপত্র প্রক্রিয়ায় অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো কেপিসি গ্রুপকেও অংশ নিয়ে প্রতিযোগিতা করে আসতে হবে। কালিপ্রদীপ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তিনি এ প্রকল্পটির ব্যাপারে খুবই উৎসাহী এবং আশাবাদী। সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যেই এটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম কেপিসি। এমনকি ডিজাইন পরিবর্তন করা হলেও সরকারের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার মতো সক্ষমতা কেপিসির রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, অন্য কোনো নামিদামি আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যেই এ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে। যদিও এখনো কোনো ধরনের বাস্তবায়নমুখী কাজ শুরুই হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি হবে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স, যা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। ৭০ থেকে ১০০ একর জমির ওপর নির্মিতব্য ১৪২ তলা এই ভবনের মূল আকর্ষণ হবে কনভেনশন সেন্টার, স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও স্টেডিয়াম। কনভেনশন সেন্টারের ধারণক্ষমতা হবে পাঁচ হাজার লোকের। আর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা হবে ৫০ হাজার দর্শকের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাচল নতুন শহর এবং ওই অঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ এই টাওয়ার নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া রাশিয়া এবং মালয়েশিয়াও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গী হতে চায়। ইতিমধ্যে এই ভবনের প্রাথমিক নকশা তৈরি করেছে রাজউক। গত বছর সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের জন্য ১০০ একর জায়গা প্রয়োজন জানিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। প্রথম দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বাচল নতুন শহরে জায়গা দিতে রাজি হলেও পরে পূর্বাচল নতুন আবাসিক শহরের পাশে জলসিঁড়িতে জায়গা দিতে সম্মত হয়েছে। রাজউকের একটি সূত্র জানায়, ওই ভবনে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টার, হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল থাকবে। টাওয়ার ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন এবং নান্দনিক স্থাপনা। উচ্চতার দিক দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ের ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুতল ভবনটি রয়েছে চীনের সাংহাইয়ে ১২৮ তলাবিশিষ্ট। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে সৌদি আরবের জেদ্দায় নির্মাণাধীন ২০৫ তলা কিংডম টাওয়ার। বাংলাদেশের পূর্বাচল কিংবা জলসিঁড়িতে ১৪২ তলা এই আইকনিক টাওয়ার নির্মিত হলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু ভবন। এ টাওয়ার নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (১.৪ বিলিয়ন ডলার)। আইকনিক টাওয়ারের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, ভবনের দিকে তাকালেই মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মিত হলে দুই দিক দিয়ে ’৭১ লেখাটি ফুটে উঠবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর