শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ : সুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে শুধু বাংলাদেশেই নয়, এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা উঠে এসেছে রাজধানীতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গোলটেবিল আলোচনায়। একই সঙ্গে এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : প্রেক্ষিত বর্তমান পরিস্থিতি আর সম্ভাব্য করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের নির্বাহী সদস্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। এতে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, রাজনীতিবিদ এস এম আকরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বাহাউদ্দিন চৌধুরী, সমাজকর্মী রেহানা সিদ্দিকী, নায়েবের সাবেক মহাপরিচালক আনোয়ারুল হক প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, এ সমস্যার আশু সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের বিভিন্ন ঘটনার কারণে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যেতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর চাপ সহ্য করা দুরূহ হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু ভয়াবহ নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই বিরাট উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ করে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। ফলে জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টায় স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, এমনকি দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়তে পারে তারা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো চরমভাবে নিগৃহীত ও ক্ষুব্ধ এই জনগোষ্ঠীকে স্বার্থান্বেষী মহল উগ্রবাদের পথে প্ররোচিত করতে পারে; যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করতে পারে। বিশিষ্ট কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ’৭১-এর পর এ ধরনের বিপর্যয় বাঙালির জীবনে আর আসেনি। এটা চরম মর্মান্তিক ঘটনা। এটা শুধু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, বাঙালির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র। কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারের ভিতরেই অনেক দায়িত্বজ্ঞানহীন বিষয় দেখছি, যা কাম্য নয়।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেনোসাইডের ১০টি শর্ত রয়েছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় যার মধ্যে প্রতিটি রয়েছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় চরমভাবে নিগৃহীত এই জনগোষ্ঠীকে স্বার্থান্বেষী মহল উগ্রবাদের পথে প্ররোচিত করতে পারে; যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে এবং তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেভাবে কাজে আসেনি। এই সমস্যায় সমর্থন আদায়ের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে ভারত, চীন, রাশিয়া সফর করতে পারেন।

রাজনীতিবিদ এস এম আকরাম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা কূটনৈতিকভাবে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যাদের বন্ধু বলে মনে করি, বন্ধু বলে প্রচার করি, এ রকম পরিস্থিতিতে তারাই পাশে দাঁড়ায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ভাসানচর ও বালুর চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা আত্মঘাতী। এ রকম পরিকল্পনার এখনই কোনো প্রয়োজন নেই।

মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার চরম হুমকি। এই ইস্যুতে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আর সেটা কিন্তু আছে, আমাদের সবাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রায় একই রকম কথা বলছে। তবে দৃশ্যমান কোনো প্লাটফরম হয় তো নেই।

 

সর্বশেষ খবর