শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগেই মহড়া দিয়ে যায় খুনিরা, ফোন করলেও আসেনি পুলিশ

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

আগেই মহড়া দিয়ে যায় খুনিরা, ফোন করলেও আসেনি পুলিশ

নারায়ণগঞ্জের কাশীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক। গতকাল মুঠোফোনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। এসপি বলেন ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে দিয়েছেন।’ এদিকে নিহত দু’জনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেছেন, লাশ দুটির শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কাশীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিহত মিল্টনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। এ সময় তার স্ত্রী মাজেদা বেগম জানান, মিল্টন ও পারভেজকে যারা হত্যা করেছে তাদের সবাইকে আমরা চিনি। তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। খুনিরা হত্যার পূর্বে আমাদের বাড়িতে এসে গালাগাল করে হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে। মিল্টন মাল্টিপারপাস ব্যবসা করেন। তাই তাকে চাঁদা দিতে হবে বলে হত্যাকারীরা হুমকি দিয়ে যায়। হুমকির সময় আমরা বার বার ফতুল্লা মডেল থানায় ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশকে আসতে অনুরোধ করি। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা পর হত্যাকাণ্ড শেষে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে পুলিশ। হত্যা শেষে খুনিরা হত্যাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে। এতে সহজেই বোঝা যায় হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা কতটা সময় পেয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে আমরা পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মূলত যারা হত্যাকারী তাদের পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে। ইতিমধ্যে মামলায় বিভিন্ন জনের নাম না দিতে আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা চাই। বিকালে লাশ বুঝে পেয়েছি। দাফন কাজ শেষ করে রাতে থানায় মামলা করব। তবে আসামিদের নাম বলতে তিনি রাজি হননি। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত মিল্টন এবং হামলাকারীরাও মহানগর বিএনপি নেতা হাসান আহাম্মেদ-মজিদ খন্দকার অনুসারী ছিল। মিল্টন কয়েকদিন আগে শহরের বাবুরাইল এলাকায় বাপ্পি্ নামে একজনকে কুপিয়ে আহত করেছিল। যার রেশ ধরে এদিন সন্ধ্যায় রাজীবের গ্যারেজে বিচার-শালিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শালিসীকেও মিল্টন তেমন একটা পাত্তা দেয়নি। এর জের ধরে প্রথমে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বিএনপি নেতা মজিদ খন্দকারসহ একদল লোক এখানে এসে একপর্যায়ে মিল্টনের বাড়িতে গিয়ে গালাগাল করে চলে যায়। এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পর ধারালো অস্ত্র হাতে শহরের বাবুরাইল এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে শহীদ, ভূইপাড়া আলসাবা এলাকার রাকিব, মামুনের ভাই ফয়সাল, মোক্তার, রবিনসহ প্রায় ২০/৩০ চাপাতি রাম দা হাতে দৌড়ে এসে রিকশার গ্যারেজে ঢুকেই মিল্টনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। এ সময় পারভেজ মিল্টনকে বাঁচাতে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন জানান, দুই যুবকের পরিবার লাশ দাফনে ব্যস্ত। রাতে মামলা দায়ের হবে। তিনি আরও জানান, তদন্তের স্বার্থে খুনিদের নাম বলা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানাধীন কাশীপুর ইউনিয়নের হোসাইনী নগর এলাকায় রাজীবের মালিকানাধীন অটো রিকশার গ্যারেজে একটি শালিসি বৈঠকে মিল্টন ও পারভেজ নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সেখানে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত মিল্টন (৩০) কাশীপুর হোসাইনী নগর ছবির হাওলাদারের বাড়ির ভাড়াটিয়া সাহেব আলীর পুত্র। সে স্থানীয় ছায়াবৃত্ত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ কোম্পানির মালিক ছিলেন। পারভেজ (২৮) একই এলাকার মিজানুর রহমানের পুত্র ও উক্ত মাল্টিপারপাসের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর