বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গোয়েন্দা কাহিনী ৪৭

কার্টন ভর্তি লাশটি স্কুল ছাত্রীর

মির্জা মেহেদী তমাল

কার্টন ভর্তি লাশটি স্কুল ছাত্রীর

গভীর রাত। হুইসেল বাজিয়ে বিকট শব্দে স্টেশনে ট্রেন এসে থামল। যাত্রীরা নামছে। কুলিদের হাঁকডাক। নীরব নিস্তব্ধ ছোট্ট মফস্বল শহরের এই স্টেশনটিতে এখন তুমুল হৈচৈ। রেলওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য ধরাধরি করে একটি কাগজের কার্টন নামাচ্ছে ট্রেনের একটি বগি থেকে। তারা কার্টনটি নিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমে যায়। পেছন পেছন উত্সুক জনতা। আবারও হুইসেল। ট্রেনটি স্টেশন ছাড়ে। স্টেশনে আবারও নিস্তব্ধতা। শুধু নিস্তব্ধতা নেই স্টেশন মাস্টারের রুমে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা খুব ব্যস্ত একটি কার্টন নিয়ে। পুলিশ স্টেশন কর্মকর্তাদের সামনে কার্টনটি খুলতে শুরু করে। স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা কার্টনের মুখ খুলতেই সবার চোখ কপালে ওঠে। লাশ! ৮/১০ বছরের একটি শিশুর। পুলিশ ও কর্মকর্তারা হতবাক। হায়েনার দল এভাবে একটি শিশুকে হত্যার পর প্যাকেট করেছে! তাকানো যাচ্ছিল না। লাশটির দিকে পলিথিনে পেঁচিয়ে শিশুটির লাশ জোড়া লাগানো দুটি কার্টনের ভিতরে ঢোকানো হয়েছিল। চাপ দিয়ে ঘাড় ভেঙে বুকের কাছে আনা হয়েছে। পা দুটি শিশুটিরই সালোয়ার দিয়ে বেঁধে ঘাড়ের ওপরে ওঠানো হয়েছে। মুখও ছিল বাঁধা। মৃত্যুর আগে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়।  জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের একটি বগি থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার হয়েছিল এভাবেই। ২০১২ সালের এপ্রিলে উদ্ধার হওয়া শিশুর লাশের পরিচয় মিলে চার দিন পর। ঢাকার একটি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। পরে কার্টনে ভরে প্যাকেট করে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়। জামালপুরে মালিকবিহীন লাশের প্যাকেট উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ঘাতক দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ট্রেন থেকে উদ্ধার হওয়া কার্টনে ভরা লাশের পরিচয় মিলেছে। তার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস (১০)। সে ঢাকার উত্তরার একটি স্কুলের শিক্ষকের মেয়ে। নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকার আল সাবাহ্ একাডেমির চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। জান্নাতুল ফেরদৌস তার শিক্ষক বাবার সঙ্গে আশকোনা এলাকার ৫৫৬ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকত। জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ জানায়, জান্নাতুল ফেরদৌসের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে আন্তনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কামরায় কার্টনের ভিতরে মেয়েটির লাশ পাওয়া যায়। এরপর জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের একটি দল ঢাকায় যায়। দলটি দক্ষিণখান থানার পুলিশের সহযোগিতায় আশকোনায় নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসদের বাড়ির মালিক কাজী মহিউদ্দিন মোহনসহ (২৮) দুই যুবককে গ্রেফতার করে। অপর যুবক হলেন ওই বাড়ির চারতলার ভাড়াটে আরিফ বিল্লাহ (২৫)। আরিফ নিজেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী বলে দাবি করেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ পৌরসভার মাসকান্দা এলাকায়। আরিফের সঙ্গে মহিউদ্দিনের বেশ সখ্য ছিল। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে আরিফ বিল্লাহ চকলেট কিনতে পাঠানোর কথা বলে জান্নাতুল ফেরদৌসকে ডেকে নেন। এর পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন পত্রিকা ও টেলিভিশনে শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর ও লাশের শরীরের জামা দেখে তারা নিশ্চিত হন, লাশটি জান্নাতুল ফেরদৌসের। আরিফের বাসার শোবার ঘর থেকে একটি কলম (সাইন পেন), কাগজের বড় একটি কার্টন, মুঠোফোন নম্বর লেখা কাগজ, চকলেট, স্কচটেপ, মদ ও বিয়ারের খালি ক্যান ও কিছু গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। আলামত দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, তারা শিশুটির লাশভর্তি কার্টন প্রথমে বেনামে কুরিয়ার সার্ভিসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধরা পড়ার আশঙ্কায় পরে তা ট্রেনে তুলে দেয়। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর