বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

দৃশ্যমান হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথ

বহুল প্রত্যাশিত খুলনা-মোংলা রেলপথ দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে খুলনার ফুলতলা থেকে মোহাম্মদনগর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলে এখানে বসানো হবে রেলপাটি। এ জন্য ভারত থেকে ৮ হাজার মেট্রিক টন ওজনের ইউআইসি রেলপাটি আনা হয়েছে।

পাশাপাশি রূপসা নদীতে রেলসেতু নির্মাণের ওয়ার্কিং পাইলের কাজ চলছে পুরোদমে। দু-এক দিনের মধ্যে বোরিং করে ইস্পাতের খাঁচা বসানো ও কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। সব মিলিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০১৯ সালের মধ্যে  মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারা দেশের রেল যোগাযোগ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মোংলা বন্দর পুরোপুরি সচল হবে। আর শিল্পনগরী খুলনা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এতে খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত আটটি স্টেশন থাকবে। প্রকল্পের অন্যতম কম্পোনেন্ট রূপসা নদীতে তৈরি হবে ৭১৬ দশমিক ৮ মিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতু, যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৬ কোটি টাকা। খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক মো. মজিবর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রেলপথ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা অংশের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই। ডাকাতিয়া বিলের মধ্য দিয়ে সংযোগ রাস্তার কাজ ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজও শেষ পর্যায়ে। ফুলতলা রেলস্টেশনেরও নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সরেজমিন দেখা গেছে, খুলনার ফুলতলা থেকে ডাকাতিয়া বিলের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদনগর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। জমি থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় রেললাইন বসানোর জন্য মাটি ভরাট করা হচ্ছে। খুলনার রূপসা সেতুর পাঁচ কিলোমিটার ভাটিতে বটিয়াঘাটা উপজেলায় রেলসেতু নির্মাণের জন্য একাধিক পাইলিং রিং বসানোর কাজ চলছে। এটি তৈরি করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসেন ও টুবরো লিমিটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার আইসি। এদিকে খুলনা-মোংলা রেলপথের বাগেরহাট অংশের কাজও শুরু করা হয়েছে। ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের ভাগা থেকে দিগরাজ পর্যন্ত সোয়া ১১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ করছে ক্যান এন্টারপ্রাইজ। রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হলে রেলপথে মূল কাজ শুরু করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারতের ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, রেললাইন স্থাপনের জন্য ১০ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন ইউআইসি রেলপাটি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ভারত থেকে আট হাজার মেট্রিক টন রেলপাটি আনা হয়েছে। এগুলো ফুলতলা স্টেশনের কাছে মজুদ রাখা হয়েছে। বাকি দুই হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউআইসি রেলপাটি দু-এক দিনের মধ্যে মোংলায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় এক লাখ পিচ কংক্রিটের স্লিপার আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম জানান, বাগেরহাটের ৩০ কিলোমিটার রেলপথের গাছপালা ও স্থাপনা অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে। মাটি খননের পর সেখানে এখন বালু ভরাটের কাজ চলছে। রেলসেতু নির্মাণের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হলে এটি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মোংলা বন্দরের প্রাণ সঞ্চার করবে।

খুলনা-মোংলা রেললাইন, পদ্মা সেতু, মংলা বন্দর, ভৌত অবকাঠামো সব মিলিয়ে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থার সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তার মতে, খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতির যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, তা মূলত খুলনা-মোংলা রেলপথ ও পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে ভারতের সেভেন সিটার আন্তযোগাযোগ ও নেপাল-ভুটানের ট্রানজিটের কেন্দ্রবিন্দু হবে মোংলা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে হারানোর ‘লিংকেজ’টা পুনরুদ্ধার হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর