শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেসবুকে এসএমএসের জন্যই হত্যা করা হয় সুমনাকে

মাহবুব মমতাজী

ফেসবুকে এসএমএসের জন্যই গৃহবধূ জান্নাতুল বুশরা সুমনাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তার স্বামী রাসেল। দুই দফা রিমান্ড শেষে রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাসেল। পুলিশ জানায়, স্বীকারোক্তিতে রাসেল  জানিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনের এক বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুকে নিয়মিত চ্যাট হতো সুমনার। কয়েক দিন আগে ওই বন্ধু এসএমএস করেন সুমনাকে। এসএমএসে সুমনাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছিল বলে দাবি রাসেলের। এ নিয়ে সুমনার সঙ্গে রাসেলের তিন দিন আগে ঝগড়াও হয়। আগেও অফিস শেষে দেরিতে বাসায় ফেরা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে। এভাবে সুমনার প্রতি সন্দেহ বাড়তে থাকে রাসেলের। গত ৮ অক্টোবর বাসায় ফেরার পরই আবারও ওই এসএমএস নিয়ে তর্ক হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে মারামারি হলে মেঝেতে পড়ে যান সুমনা। এ সুযোগে তাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করেন রাসেল। ছটফট করতে করতে একসময় সুমনার নিথর দেহ পড়ে থাকে। এ ঘটনার পুরো দৃশ্যটি দেখেছেন তাদের বিপরীত ভবনের এক বাসার গৃহকর্মী। তিনিই এখন সুমনা হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী। ওইদিন রাতে বনশ্রীর সি ব্লকের ৩৪ নম্বর বাসার সাত তলা থেকে বুশরাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ফরাজী হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমনাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত ১২টার দিকে সুমনার বাবা মোহাম্মদ রফিক রাসেলকে অভিযুক্ত করে রামপুরা থানায় মামলা করেন। এর পরই ঢামেক হাসপাতাল থেকে রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসার কেয়ারটেকার শামসুল, রাসেলের বন্ধু আরমানসহ কয়েকজনকে থানায় আনা হয়। শামসুল পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ‘বাসায় ওঠার পরই রাসেল নিচে নেমে তাকে দ্রুত দরজায় তালা দিতে বলেন। তার বাসায় বাইরের লোক ঢুকেছে বলেও জানান। তালা দিয়ে ওপরে উঠে গিয়ে দেখি কোনো লোক নেই। কিন্তু ঘরের ভিতরে তার স্ত্রী অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন।’

হাসপাতালে রাসেল দাবি করেন, কোনো এক দুর্বৃত্ত বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলেও তার সন্দেহ। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে তিনি দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু ভিতর থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। বুশরার ফোনে কল দিলেও তা রিসিভ হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় দরজা খুলে এক যুবককে বেরিয়ে যেতে দেখেন তিনি। তাকে ধরতে গেলে ওই যুবক একটি ইট নিয়ে উল্টো তাকে তাড়া করে। পরে তিনি দৌড়ে নিচে নেমে কেয়ারটেকারকে দরজা আটকাতে বলেন। দরজা লাগিয়ে ওপরে উঠে দেখেন ওই যুবক পালিয়ে যায়। এরপর বাসায় ঢুকে দেখেন সুমনার হাত-মুখ বাঁধা। গলায় কাপড় পেঁচানো। রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রথম দিকেই আমাদের সন্দেহ ছিল রাসেলের দিকে। প্রথম দফা রিমান্ডে তিনি হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেননি। দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান মোবাইলের এসএমএস দেখা নিয়ে তাদের মারামারি হয়। তারপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। আর ঘটনার দিন রাসেল যা করেছিলেন সবই ছিল নাটক।’ জানা যায়, রাসেল ও বুশরা দুজনই রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট-ওয়েস্ট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। দেড় বছর আগে তারা বিয়ে করে বনশ্রীতে বাসা নেন। রাসেল স্যামসাং কোম্পানিতে চাকরি নেন। আর বুশরা একটি আইটি ফার্মে। বুশরার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। রাসেলের বাড়ি ঢাকার দোহারে হলেও ব্যবসায়িক কারণে তার বাবা-মা থাকেন চট্টগ্রামে।

সর্বশেষ খবর