রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডারও নিষেধাজ্ঞা চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণের মতো নৃশংস নির্যাতনের জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে চাপে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডারও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পক্ষে বাংলাদেশ। আগামী সপ্তাহে ঢাকায় এই দুই দেশের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি আহ্বান জানানো হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যেতে পারে বলেও ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হবে। কারণ বাংলাদেশ মনে করে, ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার অবস্থান প্রশংসনীয়। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে যথাযথ মর্যাদায় মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে বৈশ্বিক চাপ কঠোর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অবশ্য ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও অভ্যন্তরীণভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের দাবি উঠেছে বেশ জোরেশোরেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার অন্যতম প্লাটফর্ম পার্টনারশিপ ডায়ালগের ষষ্ঠ বৈঠক আগামী ৩১ অক্টোবর ঢাকায় শুরু হচ্ছে। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক শেষে আগামী ৫ নভেম্বর পার্টনারশিপ ডায়ালগের প্লেনারি সেশন। এ বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি টম শ্যানন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবারের মতো সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়েই আলোচনা হবে বৈঠকে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুই হবে মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু। কারণ দুই দেশই চায় এই সংকটের দ্রুত সমাধান। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া ভূমিকার জন্য আরেক দফা ধন্যবাদ জানানোর পর আরও জোরালো সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করার পেছনে সরাসরি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। কংগ্রেসম্যানরাও চান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া  হোক। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে তা মিয়ানমারের বর্বর সেনা কর্মকর্তাদের ওপর খানিকটা হলে চাপ সৃষ্ট্রি করতে পারে। এ ছাড়াও বিশ্ব পরিমণ্ডলের অন্যান্য ফোরামেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে মানবাবিকতার প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনার কথাও যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে বৈঠকে। পার্টনারশিপ ডায়ালগে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সুশাসন, শ্রম অধিকারের মতো বিষয়গুলোর নিয়মিত পর্যালোচনাও করবেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। এর আগে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়নের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা নিয়েছে তার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিক যাতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সুস্পষ্ট ফল পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, ঢাকায় রবিবার বাংলাদেশ ও কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার যৌথ পরামর্শ সভার বৈঠক বসবে।   বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়াবিষয়ক সহকারী উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড ববিঅ্যাশ। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।  দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, সুশাসন, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উন্নয়ন সহযোগিতা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, শ্রমমান, বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। কানাডায় বসবাসরত বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি নূর চৌধুরীর ফেরতের বিষয়টিও আলোচনায় তুলবে ঢাকা। তবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী কানাডার সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কানাডার জনগণের সোচ্চার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও নিবিড়ভাবে কানাডাকে পাশে চাইবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বা ইইউর মতো কানাডার পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে সরাসরি চাপ প্রয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা তাও জানতে চাইবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু যে কানাডার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে তা জানিয়ে ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতে বাংলাদেশের সব সংকটকালেই কানাডা পাশে ছিল, আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও বিস্তারিত জানতে এবং মানবিকতার প্রয়োজনে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ততায় আগ্রহী কানাডা।

সর্বশেষ খবর