রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইউরোপ থেকে আসছে শূকরের মাংসের মৎস্য-পোলট্রি খাদ্য!

অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রণালয়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইউরোপ থেকে আসছে শূকরের মাংসের মৎস্য-পোলট্রি খাদ্য!

দেশের পোলট্রি, মৎস্য ও পশু খাদ্যের নামে ইউরোপ থেকে নিষিদ্ধ খাদ্য ও শূকরের মাংসের তৈরি প্রাণিজ প্রোটিন আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। চট্টগ্রামের তিনটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও চিহ্নিত হয়েছে, যারা এ ধরনের নিষিদ্ধ খাদ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত। জানা গেছে, এসব নিষিদ্ধ খাদ্য এবং শূকরের মাংসের তৈরি প্রাণিজ আমিষ পোলট্রি, মৎস্য ও পশু খামারে ব্যবহার হচ্ছে এবং শেষপর্যন্ত ওই পোলট্রি, উৎপাদিত মাছ খাদ্য হিসেবে মানুষের খাবারের টেবিলে যাচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কেউ কিছু জানতেই পারছে না।

সম্প্রতি এক সভায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক জানান, পোলট্রি খাদ্য, পোষা প্রাণীর খাদ্য ও মৎস্য খামারগুলোর প্রধান আমিষ বা প্রাণিজ প্রোটিন হিসেবে ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ১৯৯৮ সালে ইউরোপে ম্যাডকাউ রোগ আক্রমণের পর ওই এলাকা থেকে এই পণ্য আমদানি সীমিতকরণ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে আমদানি নীতি আদেশে, যেসব দেশ বিএসই (বোভাইন স্পঙ্গিফর্ম এনসেফালিপ্যাথি) ও টিএসই (ট্রান্সমিস্যাবেল স্পঙ্গিফর্ম এনসেফালিপ্যাথি)-তে আক্রান্ত, সেসব দেশ থেকে ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। কারণ বিএসই রোগটি মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে যা স্নায়ু কোষকে বিকল করে দেয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা ইউরোপ থেকে এই নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি করছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় আন্তমন্ত্রণালয় সভাও করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, যার একটি কার্যবিবরণী এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। গত মে মাসে এই সভাটি হয় এবং গত ৮ জুন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই কার্যবিবরণীতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ওই সময়ের সহকারী পরিচালক (প্রাণীস্বাস্থ্য ও প্রশাসন) ড. মো. আবু সুফিয়ান অভিযুক্ত কোম্পানির নাম উল্লেখ করে জানান, তিনটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউরোপ হতে নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানির অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে চিটাগাং ফিস প্রোডাক্টস লি., আরএমজি ইন্টারন্যাশনাল এবং বারবকুণ্ড এগ্রো। একই কার্যবিবরণীতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প বিকাশমান এবং পোলট্রি ও পোলট্রিজাত পণ্যের বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণে পোলট্রি ফিডের গুণগত মান নিশ্চিত করা জরুরি। মিট অ্যান্ড বোন মিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোথাও সার হিসেবে, কোথাও জ্বালানি হিসেবে, কোথাও পেট ফিড অর্থাৎ পোষাপ্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত মিট অ্যান্ড বোন মিল ইউরোপ থেকে আমদানির চেষ্টা করছে সংক্রান্ত অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে এসেছে। বাণিজ্য নীতিতে শূকরের মাংসের তৈরি মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী শূকরের মাংসের তৈরি মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি অব্যাহত রেখেছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপ থেকে নিষিদ্ধ উপাদান যা পর্ক (শূকর) এর তৈরি বা পেট ফিড বা ফুয়েল গ্রেড বা ম্যানুয়ার গ্রেড হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলো আমদানি করা হচ্ছে। ওআইসি ইউরোপ থেকে মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এ পর্যায়ে ইউরোপ থেকে এসব পণ্য শিপমেন্ট হচ্ছে। এ বিষয়গুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার বেগম জেবুন্নেছা জানান, পোলট্রি শিল্পের খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের অনাপত্তি পত্র, এলসি ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে পণ্য খালাস করা হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনাপত্তি পত্রের সঙ্গে প্রোফর্মা ইনভয়েসের (পিআই) কপি যায় না। ফলে একই পিআই দিয়ে একাধিক পণ্য আমদানির সুযোগ তৈরি হয়। তিনি বলেন, বিশেষ পণ্যগুলো একাধিকবার পরীক্ষা করা হয়। তবে ফিশ মিলগুলো দৈবচয়নের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। আমদানি নিষিদ্ধ এ ধরনের খাদ্য আমদানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর বলেন, আমদানি নীতির ১৭ ধারা, ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে : মৎস্য খাদ্য, হাঁস-মুরগির খাদ্য ও পশুর খাদ্য হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পূর্বানুমতিক্রমে মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি করা যাবে, এবং তা আমদানির ক্ষেত্রে উৎস্য ও প্রাণীর নাম উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া শূকরের উপজাত খাদ্য, ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও কীভাবে নিষিদ্ধ এসব পণ্য কাস্টমস ছাড় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার ধারণা তারা দৈবচয়নের ভিত্তিতে এসব খাদ্য পরীক্ষা করে।

সর্বশেষ খবর