সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা
মহাসড়কে তীব্র যানজট

ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হলো না ওদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

‘ভাই, গত দুই দিন ধরে গাড়িতে আছি। স্বপ্ন ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কিন্তু যানজটের কারণে তো ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারছি না। আমাদের বাসের সামনে পেছনে শুধু বাস আর বাস। সব বাসেই ভর্তিচ্ছুরা আহাজারি করছে। আমাদের বাস এখনো বঙ্গবন্ধু সেতুর মাঝখানে। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল ভাই। যানজটের কারণে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারলাম না।’ গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন আল আমীন সাদিক নামে এক ভর্তিচ্ছু। চট্টগ্রামের  মুরাদপুর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছিলেন তিনি। তার রোল নম্বর E-1-২০০২৮। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ অধিভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া ‘ই-১’ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যানজটের কারণে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। শুধু সাদিক নন, যানজটের কারণে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষায় ৬৫২৩ জন ভর্তিচ্ছু রাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ফয়জার রহমান। ঢাকা-টাঙ্গাইল অভিমুখী বিভিন্ন মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটই কেড়ে নিল তাদের স্বপ্ন। ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ, শুধু যানজট নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আবাসন নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের।

ক্যাম্পাস ও আশপাশের বিভিন্ন দোকানগুলোতে খাবারের চড়া মূল্যে যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। 

জানা গেছে, পরীক্ষার্থীদের মেসে অবস্থানের বিনিময়ে অর্থের পরিমাণ নির্ধারিত করে দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাজশাহী মেস মালিক সমিতির নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। নগরীর বিনোদপুর, কাজলা, তালাইমারির কয়েকটি মেসে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছ থেকে প্রতি রাতের জন্য ১০০ থেকে ৬০০ টাকা নিচ্ছে মেস মালিকরা। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে মেস মালিকরা বলছেন, পুলিশ ও মেস মালিক সমিতি তাদের টাকা নিতে বলেছে। বিনোদপুর এলাকার রমেশা ছাত্রী মহল, তালাইমারির বিসমিল্লাহ ছাত্রীনিবাস, নূপুর ছাত্রীনিবাস, উপর ভদ্রা এলাকার শিরিন ছাত্রীনিবাসসহ কয়েকটি মেসে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি রাতের জন্য ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিনোদপুর এলাকার পাটোয়ারী টাওয়ার ছাত্রীনিবাস, গফুর মঞ্জিল, মাহিন ছাত্রীনিবাস, দৃষ্টি ছাত্রীনিবাস, অপূর্ব ছাত্রীনিবাস, এনএন ছাত্রাবাস, শাহাবুদ্দিন ছাত্রাবাস, স্বপ্নীল ছাত্রাবাসসহ বেশ কয়েকটি মেসে প্রতি রাতের জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বিনোদপুরের ইখওয়ান ছাত্রীনিবাস প্রতি রাতের জন্য ১৫০ টাকা নিচ্ছে। দেখা গেছে, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুই-তিনগুণ বেশি মূল্যে খাবার বিক্রি করছে দোকান মালিকরা। ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, আবাসন আর খাবার সমস্যার পাশাপাশি রিকশা ভাড়া নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তবে প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান বলেন, আমরা সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের একটু সমস্যা হচ্ছে।

২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট : এদিকে টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার সড়কেই অতিরিক্ত যানবাহন ও বৃষ্টিতে রাস্তায় খানাখন্দের জন্য যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। ফলে দুই ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। গত তিন দিনের বর্ষণে মহাসড়কের খানাখন্দ বেড়ে গেছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়া আর অবিরাম বর্ষণের ফলে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভারী যানবাহনগুলো চলাচল করতে গিয়ে রাস্তায় আটকে যাচ্ছে এবং বিকল হয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে রসুলপুর পর্যন্ত রাস্তার করুণ দশা। রাবনা শহর বাইপাস, করটিয়া বাইপাস, নাটিয়াপাড়া, জার্মুকী, পাকুল্লা, আগধল্লা, কদিমধল্লা, মির্জাপুর ও ধেরুয়া রেল ক্রসিং এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশের মির্জাপুর থানার পরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন সেলিম জানান, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে গাড়ির গতি কমে যাওয়ায় কোনো কোনো জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর