সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি টানা বৃষ্টিতে

প্রভাব পড়েছে বাজারে

প্রতিদিন ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুলাউড়ায় মনু নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম, ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর ভাঙা বেড়িবাঁধের ১১টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘর, ফসল, সড়ক এবং রেল লাইনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের নিজস্ব  প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— মৌলভীবাজার : বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে সৃষ্ট তীব্র স্রোতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদীর বাঁধের দুই অংশের প্রায় ৪৫০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩০টি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। গতকাল ভোররাতে বাঁধ ভেঙেছে বলে মনু নদীর তীরবর্তী হাজিপুর, শরীফপুর, টিলাগাঁও ইউনিয়নের স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রাঙামাটি : টানা বৃষ্টিতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি বেড়েছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। পানির চাপ কমাতে খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রায় ১৬টি গেট। এ পানি ছাড়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল আর বন্যায় ডুবে গেছে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব উপজেলার প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবার। একই সঙ্গে ঘোলা, ময়লার কারণে দূষিত হয়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। ফেনী : দুই দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর ভাঙা বেড়িবাঁধের ১১টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফুলগাজী উপজেলার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ২০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কহিনুর আলম। হবিগঞ্জ : বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পানিতে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। বাঁধ এলাকায় লোকজন বসতভিটা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে নদীর বাঁধের ভিতরে শহরের দানিয়ালপুরের কয়েকটি বাড়িতে পানি উঠে পড়েছে। পাবনা : অতি বৃষ্টিতে পাবনার চাটমোহরের চাঁদামাড়া নামক স্থানে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গতকাল ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সংস্কার কাজ শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেল চলাচল শুরু হয়। সকালে চাটমোহরের ২১ নং রেল ব্রিজের পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঝিনাইদহ : টানা বৃষ্টিতে ঝিনাইদহের হাজার হাজার কৃষকের খেতের ফসল নষ্ট হতে চলেছে। বৃষ্টিতে ধান, আখসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান, আখ, মুলা, মরিচ, কফি, বেগুন জাতীয় বিভিন্ন ফসলের খেতে পানি জমে আছে। এতে খেতের গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। নাটোর : টানা বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে নাটোরের বাগাতিপাড়া প্রায় তিনদিন যাবত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের বাগাতিপাড়া এরিয়া অফিসের কর্তব্যরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে বাগাতিপাড়ায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এদিকে নাটোর-বাগাতিপাড়া প্রধান রাস্তায় গাছ পড়ে থাকলেও তা অপসারণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় দুদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত বিঘা জমির আমন খেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ধান খেতগুলোতে পানি জমে থাকায় পড়ে যাওয়া ধান গাছ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা রক্ষায় নির্মাণাধীন নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধে আবারও ধস নেমেছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাঁধটির খাস কাউলিয়া চৌদ্দরশি পয়েন্টে প্রায় ৭০ মিটার বিলীন হয়ে যায়। এ নিয়ে গত ৫ মাসের ব্যবধানে বাঁধটির বিভিন্ন পয়েন্টে ১১ বার ধস নামল। বার বার ধস নামায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। মুন্সীগঞ্জ : বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ থাকার প্রায় ২ দিন পর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সব প্রকার নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে এ রুটের নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট ও রাত ১০ টা থেকে  ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রভাব পড়েছে বাজারে : এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, তার ওপর সাম্প্রতিক বৃষ্টির সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে কয়েকদিনের ব্যবধানে পণ্যের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সবজির দাম। এ তালিকায় আরও রয়েছে পটোল, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স, ধুনদল, বেগুন, ধনেপাতাসহ সবকটি সবজি। বেড়েছে মাছ ও পিয়াজের দামও। এছাড়া হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর ও বারিধারার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, তবুও দাম কমছে না। শীতকাল শুরু না হলেও শীতের কিছু সবজি এরই মধ্যে বাজারে চলে এসেছে। তবে মোটা চাল কেজিতে কমেছে তিন থেকে চার টাকা। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী মাসে নতুন চাল উঠলে দাম আরও কমবে।

 গতকাল মিরপুর বাজারে প্রতি কেজি পটোল আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বারিধারা বাজারে এ সবজিটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। একই অবস্থা করলা, ঢেঁড়স, ধুনদল, বেগুনসহ সবকটি সবজির ক্ষেত্রে। মিরপুর বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ বাজারে এ সবজিটির দাম বেড়েছে ৫ টাকার বেশি। করলা মিরপুর বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা কেজিতে। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। বেগুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মিরপুরে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। আগের সপ্তাহের মতোই মিরপুর বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আর বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। শিমও আগের সপ্তাহের মতো ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মিরপুরে। বারিধারা বাজারে এ সবজিটি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। সবজির দামের মতো মিরপুর অঞ্চলের বাজারগুলোর সঙ্গে বারিধারা বাজারে কাঁচা মরিচ, ব্রয়লার মুরগি, ডিমের দামে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। মিরপুর অঞ্চলের বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি দরে, যা বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে মিরপুর বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। গতকাল মিরপুর বাজারে সাদা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা কেজি দরে। আর বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। লাল মুরগি মিরপুরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। তবে গরু ও খাসির মাংস মিরপুর ও বারিধারা বাজারে একই দামে বিক্রি হয়েছে। আগের মতোই ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস এবং খাসির মাংস ৭০০ থেকে সাড়ে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। সবজির দাম কমলেও বাড়ার তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছে পিয়াজ ও ডিম। আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ মিরপুরে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়।

 আর বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। এছাড়া মিরপুর বাজারে যে ডিমের দাম ছিল ২৪ টাকা হালি, তা বেড়ে গতকাল হয়েছে ২৮ টাকা। একই ডিম গতকাল বারিধারা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা হালি।

মিরপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আবদুর রশিদ দাবি করেন, প্রায় সব সবজির দামই আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। এসবের পাশাপাশি গতকাল পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। গতকাল রুই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়, কাতলা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

সর্বশেষ খবর