সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংক গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকার আশিক জামান এলিন নামে সোনালী ব্যাংকের একজন গ্রাহক ৫ অক্টোবর দুই লাখ ৫০ হাজার এবং ১০ অক্টোবর এক লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যাংকে নিজের হিসাব নম্বরে জমা দেন। ১৭ অক্টোবর ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার হিসাব নম্বরে মাত্র ৯০০ টাকা জমা আছে। আশিক জামান এলিন জানান, ব্যাংকের শাখা প্রধান সাইফুদ্দিন সবুজ টাকা জমা করে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নেন। পরে ভাউচার রসিদে  ব্যবস্থাপক নিজে স্বাক্ষর ও সিল মেরে জমার বই ফেরত দেন। কিন্তু হিসাব নম্বরে টাকা জমা না হওয়ায় তিনি বিস্মিত। তার মতো একই অভিযোগ শহরের পাগলা মসজিদ এলাকার বিসমিল্লাহ লাইব্রেরির মালিক জুলহাস সওদাগরের। তিনি জানান, তার হিসাব নম্বরে ৮০ হাজার টাকা জমা করার জন্য ব্যবস্থাপকের কাছে দিলে তিনি স্বাক্ষর ও সিল মেরে জমার বই ফেরত দেন। কিন্তু ১৭ অক্টোবর টাকা তুলতে গিয়ে তার হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা পাননি। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজ ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে তাদের অভিযোগ। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ডিজিএম নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে ১৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলাটি দুর্নীতি সংক্রান্ত হওয়ায় এটি দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সদর মডেল থানার ওসি খোন্দকার শওকত জাহান জানিয়েছেন। শুধু টাকা আত্মসাৎই নয়, শাখা ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে।

সদর উপজেলা মোল্লাপাড়ার ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আখতার হোসেন জানান, তিনি ১০ লাখ টাকা এসএমই ঋণের আবেদন করলে ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজ ঋণ মঞ্জুরের কথা বলে তার কাছ থেকে জামানত হিসেবে ৩০ লাখ টাকার জমির দলিল ও স্বাক্ষর করা তিনটি খালি চেক নিয়ে নেন। কয়েক দিন আগে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন ঋণ মঞ্জুর হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার স্বাক্ষর করা তিনটি চেকের মধ্যে দুটি চেকে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা তুলে নেন ব্যবস্থাপক।

একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন শহরের স্টেশন সড়কের নিউ হাজী সোবহান স্টিল ফার্নিচারের মালিক আবদুস সাত্তার টিটু। তিনি জানান, জামানত ছাড়াও স্বাক্ষরসহ তিনটি খালি চেক নিয়ে নেন ব্যবস্থাপক। পরে জানতে পারেন স্বাক্ষর করা চেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন ব্যবস্থাপক। পরে চাপ দেওয়ায় নগদ চার লাখ টাকা ও ব্যবস্থাপকের নিজের হিসাবের ১১ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু ব্যবস্থাপকের উল্লিখিত হিসাব নম্বরে কোনো টাকা পাননি তিনি। তারা জানান, সোহেল, আলমগীর, বোরহান, মতি, মিলনসহ কয়েকজন দালালের মাধ্যমে ব্যবস্থাপক এমন প্রতারণা করেছেন।

প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজ এসএমই ঋণ মঞ্জুরের কথা বলে ৭০ থেকে ৭৫ জন গ্রাহকের প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ দেওয়ার পর ঢাকা থেকে তদন্ত কমিটি এসে অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজকে তাত্ক্ষণিক ময়মনসিংহে বদলি করে তাকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। তার স্থলে এজিএম মো. মাহবুবুল ইসলাম খানকে শাখা প্রধানের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত করতে আসা কর্মকর্তারা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নতুন শাখা ব্যবস্থাপক জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি। দুটি তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার বাদী ব্যাংকের ডিজিএম নূর মোহাম্মদ বলেন, গ্রাহকের হিসাবে টাকা জমা না করে ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজ আত্মসাৎ করেছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি মামলাটি করেছেন। অভিযুক্ত শাখা ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন সবুজের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর