মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্যাতিতদের জন্য দরকার কল সেন্টার

—---——————————— মোস্তাফা জব্বার


নির্যাতিতদের জন্য দরকার কল সেন্টার

‘দেশে যারা প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের জন্য এক ধরনের কল সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। আর যদি এমন কিছু গড়ে তোলা না যায় তবে আমরা কখনই ভালো কোনো অবস্থায় যেতে পারব না।’ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সামাজিক এই মাধ্যমটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা আছে কিন্তু এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিগুলো দরকার সেগুলো তারা প্রয়োগ করতে জানেন না। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করেছি যে, এখন অনেকেই বোঝেন, ফেসবুকে তার কী করা উচিত আর কোনটি অনুচিত। ফেসবুক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একজন ব্যবহারকারী হয়তো তার ছবি কীভাবে রক্ষা করতে হবে তা বোঝেন কিন্তু এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যে দক্ষতা প্রয়োজন তা তারা বোঝেন না। এজন্য আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, দক্ষতাও দরকার। আর এ দক্ষতা তৈরি বা প্রয়োগ করার বিষয়ে কেউ কোনো কাজ করছে না। ফলে বাংলাদেশে প্রতিদিন যে হারে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে সে হারে দক্ষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে না। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য যে জ্ঞান বা বিদ্যা একজন ব্যবহারকারীর দরকার তা ব্যবহারকারীরা অর্জন করতে পারছেন না। ফলে তারা বিভিন্ন প্রতারণা ও বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে খুব সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেন। এর মধ্যে অনেকে আবার একটু আবেগপ্রবণ এবং নানাভাবে মানসিক বিপর্যস্ত জীবনযাপন করার ফলে একটু খোলামেলা আচরণে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। আর এসব ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারকারী সেই কিশোরী বা তরুণীর যে সতর্কতা মেনে চলা উচিত তারা তা করতে পারেন না। অন্যদিকে এ ধরনের অপরাধ করার জন্য বাংলাদেশে কোনো অপরাধীর শাস্তি হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারও পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এ ধরনের কোনো ভুক্তভোগীকে সহায়তা করেছে এমন ঘটনাও নেই। এজন্য অভিযোগ করার কোনো জায়গা নেই। এমন অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদাহরণও আমরা দেখছি না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একসময় অ্যাসিড ছোড়ার প্রবণতা ছিল কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অ্যাসিডসন্ত্রাস কমে এসেছে। কিন্তু ফেসবুক বা মোবাইলের খুদে বার্তার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যে ‘অ্যাবিউস’-এর শিকার হচ্ছে সেই ভুক্তভোগী কোনো মেয়ে বলতে পারবেন না যে, তিনি বিব্রতকর কোনো অবস্থার শিকার হয়েছেন। কারণ, আমাদের এখানে নালিশ করারও জায়গা নেই। এমনকি অনেক অভিভাবক আছেন যারা জানেন না এ ধরনের অবস্থায় কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অভিভাবকদের বিষয়টি জানালেও এ থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। বন্ধু বা শিক্ষকদের জানিয়েও ভুক্তভোগীরা এ অবস্থা থেকে বাঁচার কোনো পথ পান না।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা প্রসঙ্গে এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘আমি শুধু জানি পুলিশের সিআইডির একটি সাইবার ইউনিট আছে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কিছু আছে বলে জানি না। বিটিআরসি বলে তাদের নাকি একটি ইউনিট আছে কিন্তু তারা আদৌ এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তা জানা নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ফেসবুক, ইউটিউব বা গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এমন কোনো ফলপ্রসূ আলোচনাও করতে পারেনি।’

সর্বশেষ খবর