সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সেবার নামে বিশৃঙ্খলা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ১০-১৫ জন জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। নারী এবং পুরুষ সবার এক্স-রে চলছে একটি মেশিনে। নারীদের জন্য আলাদা পোশাক পাল্টানোর কক্ষ না থাকায় সবার সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে তাদের। এক্স-রে শেষে কোনো ধরনের মোড়ক না জড়িয়ে রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রিপোর্টের কপি। ফলে হাতের ঘামে এবং চাপ লেগে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে এক্স-রে কপি। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিত্র ছিল এটি। সরেজমিন জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাচ্ছেন রোগীরা। আর টেস্ট করানোর দরকার পড়লে আরেক পাশে জমা নেওয়া হচ্ছে প্যাথলজির টাকা। টাকা জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে রোগীদের যেতে হচ্ছে আরেক ভবনে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে অধিকাংশ রোগীই আসেন শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। এই অসুস্থ শরীরে তাদের হেঁটে যেতে হয় এতটা রাস্তা। যারা বেশি অসুস্থ তাদের হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি মেশিনেই সকাল ৯টা-১২টা পর্যন্ত চলছে সবার এক্স-রে। পাশে আরেকটি মেশিন রয়েছে তবে হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান সেটি নষ্ট। দুপুর ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয় প্যাথলজি। গাজীপুরের মফিদুল হক তার বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসার জন্য এসেছেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। তিনি বলেন, হুইল চেয়ারের জন্য হাসপাতালের কর্মচারীরা ৫০ থেকে শুরু করে যার কাছে যেমন ইচ্ছা অর্থ আদায় করেন। এসব যেন অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। গতকাল টেস্ট করাতে দিয়ে গিয়েছিলাম। আজকে রিপোর্ট দেবে বলে জানিয়েছিল। এখন বলছে রিপোর্ট তৈরি হয়নি আগামীকাল আসেন। এতদূর থেকে এসে খালি হাতে ফেরত যেতে হবে। বার বার যাতায়াতে অসুস্থ মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। ৫২ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এর ফলে কুকুর-বেড়ালের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে এই হাসপাতাল। আর এই নোংরার মধ্যেই রোগীর ব্যবহার্য কাপড় ধুয়ে ছোট ছোট আগাছাগুলোর ওপর শুকাতে দিচ্ছেন স্বজনরা। হাসপাতালের ভিতরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রোগীর ব্যবহার্য ওষুধ, স্যালাইন, ইনজেকশনের সিরিঞ্জসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এর মধ্যেই দুপুরে খাবার নিয়ে এসে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের রান্নার কক্ষে নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেড়াল আর মাছি। নোংরা মেঝেতে ঢাকনা খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবার। ৬৭০ শয্যার এই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্যক্রম নেই বললেই চলে। থোরাসিক সার্জারি বিভাগের ৫ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডের রোগী রোকসানা খাতুন বলেন, জানালার গ্লাস না থাকায় ঝড়-বৃষ্টি হলেই ধুলা আসে, বৃষ্টির পানিতে ঘর ভেসে যায়। ঝড়ের সময় ভাঙা জানালায় পলিথিন ধরে বসে থাকতে হয়। হাসপাতালের নার্সদের বলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি।

এ সব সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমস্যা দালালের দৌরাত্ম্য তো আছেই। হাসপাতাল জুড়ে এদের অবাধ বিচরণ। প্যাথলজিতে মেশিন নষ্ট, বন্ধ হয়ে গেছে এ ধরনের কথা ছড়িয়ে রোগী নিয়ে যায় হাসপাতালের চারপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোতে। আর এ সব দালালের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেন হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং নার্স। এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শাহেদুর রহমান খানের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে এবং মোবাইলে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর