মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ দিতে প্রস্তুত বিএনপি, মাঠে জাপা

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ দিতে প্রস্তুত বিএনপি, মাঠে জাপা

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই) আসনে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি মাঠে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। এই তিন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন হাটবাজারে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দর্শনীয় স্থানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন।

গত নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. আবু জাহির। তিনি এবারও নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে  আসনটি উদ্ধারে তৎপর বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। এ আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহিরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিএনপি। পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে বিজয়ী হতে চায় দীর্ঘদিন সংসদের বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি। তবে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকা বিএনপি ক্ষমতাসীন দলকে কতটুকু চ্যালেঞ্জ দিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সাধারণ ভোটারদের। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান পৌর মেয়র আলহাজ জি কে গউছ। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। টানা তিন বার পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। তবে কোন্দলহীন মহাজোটের বিশাল বলয় নিয়ে কাজ করে যাওয়া আবু জাহির এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনীতির মাঠ। তৃণমূল রাজনীতিতেও পরীক্ষিত এ নেতা।

এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে সরব রয়েছেন শিল্পপতি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। বর্তমানে তার নেতৃত্বেই নিস্তেজ জাপা অনেকটা সতেজ। হবিগঞ্জ জেলা জাপার সভাপতি হিসেবে ইতিমধ্যে দলকে তৃণমূলে সাজাতে তৎপরতা শুরু করেছেন। তবে তিনি বার বার দল ও এলাকা পরিবর্তন করায় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তাকে নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী এম এ মুমিন চৌধুরী বুলবুলও এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এ আসনটি এক সময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। ২০০১ সাল থেকে আসনটি জাপার হাতছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়া বিজয়ী হন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। এরপর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নেওয়ায় সহজেই বিএনপি প্রার্থী আবু লেইছ মো. মুবিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মো. আবু জাহির লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং টানা দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পিপি আবুল হোসেন মোল্লা মাসুমও মনোনয়নের আশায় স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে মো. আবু জাহির বলেন, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে হাওর সবখানেই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। বাকি কাজগুলো সমাপ্ত করতে আগামীতেও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তবে এবার আওয়ামী লীগের এ দুর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি। তরুণ সমাজে জনপ্রিয় জিকে গউছকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটে জিকে গউছের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রায় ২ বছর কারান্তরীণ ছিলেন তিনি। কারাগারে থেকেই পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব সভাপতি ডা. আহমদুর রহমান আবদাল বিভিন্ন হাটবাজারে পোস্টার লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমও বসে নেই। তিনিও মনোনয়নের আশায় হাটবাজার, রাস্তাঘাটে পোস্টার, লিফলেট ও ফেস্টুন সাঁটানোর মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে জি কে গউছ বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করছি। দল যে সময় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা মেনে নিয়েছি। কারাগার থেকে দলের সিদ্ধান্তে পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সব কেন্দ্রে আমার এজেন্ট পর্যন্ত ছিল না। কিন্তু নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে পৌরবাসী আমাকে নির্বাচিত করেন।

সর্বশেষ খবর