বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
শোচনীয় পুরান ঢাকা ৫

নদী ভরাট করে ট্রাক টার্মিনাল

মাহবুব মমতাজী

নদী ভরাট করে ট্রাক টার্মিনাল

বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে ৪০০ বছর আগে ঢাকায় গড়ে উঠেছিল নগর। দেশ-বিদেশের নানা ফল-ফলাদি, মাছ আমদানি করা হতো এই নদীপথে। যে কারণে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ফলের আড়ত      গড়ে উঠেছে বাদামতলীতে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বুড়িগঙ্গা নদী এখন মৃতপ্রায়। পণ্য ওঠানামার জেটিগুলোও প্রায় বেদখলে। এ অবস্থায় এখন নদীর দুই পাশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক টার্মিনাল। স্থানীয় শ্রমিকরা জানান, এর মধ্য দিয়েই প্রতিদিন সকালে চলছে পণ্য ওঠানামা। ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, নগরী গড়ে ওঠার পর যুগ যুগ ধরে বুড়িগঙ্গার জৌলুস ছিল। ঢাকা হয়ে উঠেছিল প্রাচ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে। কিন্তু এখন নগরবাসীর আবর্জনা ফেলায় এই নদী হয়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়। প্রতিদিন রাজধানীর লাখ লাখ টন পয়ঃবর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই ভাগাড়ে। নদীকে দূষিত করছে পলিথিন, ট্যানারির বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, গৃহস্থালি বর্জ্য ও নদীর পাড়ে নির্মিত কাঁচা পায়খানা। বিষাক্ত নীলাভ-আলকাতরার মতো রং ধারণ করেছে বুড়িগঙ্গার পানি। সরেজমিন দেখা গেছে, বাদামতলীর ৩,৩/৫ রায়বাহাদুর ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষ স্ট্রিটে কাজী আফসার করিম সুপার মার্কেট। এটি বুড়িগঙ্গা নদীমুখী হয়ে নির্মাণ করা। বিপরীতে ১ নম্বর আরসিসি জেটি। জাহাজে করে আসা পণ্য খালাস হতো এই পথে। জেটির উত্তর-দক্ষিণ পাশ ভরাট করে বানানো হয়েছে ৫০-৬০টি ভ্যানের গ্যারেজ। এর মাঝে রয়েছে অন্তত ৫টি চায়ের দোকান। আর পুরো জেটিকে বানানো হয়েছে ট্রাক টার্মিনাল। যেখানে প্রতিদিন রাখা হচ্ছে ১০-১৫টি ছোট-বড় কার্গো ট্রাক। এই ট্রামিনাল ঘেঁষেই স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা আন্তজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়। একই চিত্র দেখা গেছে ২ নম্বর জেটিতেও। বাদামতলী ফল বাজারের রফিক নামে এক শ্রমিক জানান, জেটির ওপর প্রতিদিনই ট্রাক ও কার্গো ভ্যান থাকে। ট্রাক থাকাবস্থায় এই জেটি দিয়ে জাহাজের মালামাল ওঠানো-নামানো করা হয়।  ঢাকা আন্তজিলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, এ জেটি আমরা ইজারা নিয়েছি। মালামাল আনা-নেওয়ার ট্রাকগুলো রাখার জায়গা নেই, তাই এখানেই রাখা হয়। আমাদের কার্যালয়টি জেটির ওপরে না রেখে পাশে স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুইটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম জানান, বুড়িগঙ্গার পাড় ঘিরে উচ্ছেদ-ভরাট খেলা চলে। এই খেলায় জড়িত বিআইডব্লিউটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এভাবে জেটির ওপর এবং তার দুই পাশ ভরাট করে ট্রাকস্ট্যান্ড ও দোকানপাট বসানো সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ এগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কিছু না বললে আমরা কিছু করতে পারি না।  জানা গেছে, ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৩৬ নম্বর জলাধার সংরক্ষণ আইনের ২-এর (চ) ধারা পাস হয়। তার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বুড়িগঙ্গা নদীসহ দেশের ৪টি নদী, খাল-বিল দখলমুক্ত করার জন্য হাই কোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও বুড়িগঙ্গা ভরাটের উৎসব চলছে। সঙ্গে চলছে দূষণও। গত বছরের ১, ২ ও ৩ মার্চ বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদ দখল এবং ভরাট পর্যবেক্ষণ ও দূষণ পরীক্ষা করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়- একই এলাকায় বার বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। উচ্ছেদের পর ওই স্থান পুনরায় বেদখলে চলে যায়। অ্যামোক্সাসিলিন, পেনিসিলিন, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, আর অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৬২ প্রকার কেমিক্যাল বুড়িগঙ্গার পানিতে মিশছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের আবরণ-খোলস, স্যালাইন, সিরিঞ্জ, বোতল ইত্যাদি হাসপাতাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (পোর্ট ম্যানেজমেন্ট) জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সম্পূর্ণ সদরঘাটকে হকারমুক্ত করেছি। কিছুদিন আগে জেটি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। পুনরায় দখল হলে আমরা আবারও অভিযান চালাব।

সর্বশেষ খবর