বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এক সপ্তাহেই ঢুকল ১৫ হাজার

ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আরও বেড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে। পায়ে হেঁটে, ভেলায় ও নৌকায় চড়ে নানা কৌশলে গত মঙ্গলবার থেকে এক সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছে অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের কুয়াংছিদং, পাদংছা, মংডুর ধংখালী ও নাইক্ষ্যনদিয়ায় আরও অন্তত ২৫ হাজার অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও জনমনে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গা এপারে প্রবেশ করছে। গত ৭ নভেম্বর থেকে নাফ নদের ওপার থেকে ভেলায় চড়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট, দক্ষিণপাড়া, হারিয়াখালী পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। শীত মৌসুমের কারণে নদী ও সাগরে পরিবেশ শান্ত থাকায় সহজে ভেলায় চড়ে এপারে আসতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না তাদের। এ ছাড়া মাছ ধরার ট্রলারে করেও টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন শদুয়েক রোহিঙ্গা এপারে আসছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন খান বলেন, ২৫ আগস্টের পর থেকেই টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আসা শুরু করেছে। মানবতার খাতিরে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না বিধায় এখন সে সুযোগটাও তারা নিচ্ছে। এখনো প্রতিদিন বিচ্ছিন্নভাবে আসা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে শনিবার থেকে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে তিন দিনে ৫ থেকে ৬ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। দু-একদিন অপেক্ষমাণ রাখার পর তাদের তল্লাশি করে দুই ধাপে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাঠিয়েছে বিজিবি। এ ছাড়া ২০-৩০ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের স্থলসীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়েও গত দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন জানান, রাখাইন রাজ্যের তিন থানা মংডু, বুছিদং ও রাছিদং এখন রোহিঙ্গাশূন্য প্রায়। অল্প কয়েক হাজার রোহিঙ্গা যারা এখনো ওপারে আছেন, আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে তাদের ওপর নির্যাতন কমালেও কৌশলে তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ওপর অনেকটা অঘোষিত খাদ্য অবরোধ সৃষ্টি করে রেখেছে তারা। কোনো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে দিনের পর দিন ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। অনাহারে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাতের আঁধারে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা। বুছিদংয়ের উলাফে এবং উয়াছিল্লাহ (উয়াছিউল্লাহ) পাড়া থেকে আসা ছমিরা খাতুন ও অজিউল্লাহ বলেন, এখন কোনো বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে না মিলিটারিরা (সেনাবাহিনী)। আগের মতো মেয়ে মানুষের ওপর নির্যাতনও করছে না। তবে কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। আমরা খাব কী, বউ-ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাঁচব কী করে? তাই পাড়ার লোকদের সঙ্গে এখানে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতা শুরুর আড়াই মাস পার হলেও থামছে না সে স্রোত।

সর্বশেষ খবর