বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কৃষিতে

নিজামুল হক বিপুল, বন (জার্মানি) থেকে

দীর্ঘ পাঁচ বছরের কারিগরি এবং রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক ও আলোচনা শেষে ইউএনএফসিসিসি’র সদস্য রাষ্ট্রসমূহ গতকাল কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এই ঐকমত্যে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য এ সিদ্ধান্ত এক ঐতিহাসিক বিজয়। এ সিদ্ধান্ত এবারের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৩) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের একদিকে রয়েছে কীভাবে কৃষিপ্রতিবেশ (এগ্রোইকোলজিকেল জোন) অঞ্চল ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে অভিযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেই বিষয়। অন্যদিকে রয়েছে কীভাবে কৃষি খাত থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়া অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো যায়। এদিকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের দশম দিনে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। যেখানে প্যারিস রোল বুক বা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া পাঁচটি ইস্যু স্থান পাবে। এগুলো হলো— মাটির স্বাস্থ্য, মাটির কার্বন, মাটির গুণাগুণ, মাটির পুষ্টি ও জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন বিষয়ক অভিযোজন ও তার মূল্যায়ন পদ্ধতি। ইতিমধ্যে এসব ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গত নয় দিন বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এসব ইস্যুতে বিভিন্ন দেশের যে মতামত নেওয়া হয়েছে, উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সেসব তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশের হয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্থানীয় সময় আজ রাত ১০টার পর বক্তব্য রাখবেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অবস্থানপত্র তুলে ধরবেন। অবস্থানপত্রে অভিযোজন এবং প্রশমন কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা, অর্থপ্রাপ্তিতে বাধা, ভবিষ্যৎ অর্থের উৎস, সরাসরি অর্থপ্রাপ্তির জন্য এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ওপর অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা, অভিযোজন ও প্রশমন প্রযুক্তি প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অপ্রতুল অর্থায়নসহ অন্যান্য ইস্যুগুলো স্থান পাবে। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গতকাল একাধিক বৈঠকে অংশ নেন। এরমধ্যে তিনি কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। তাদের আলোচনায় স্থান পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে যাতে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা যায় সে জন্য এবারের সম্মেলন থেকে একটা গাইড লাইন তৈরি করা হবে। আগামী বছর পোল্যান্ডে হতে যাওয়া সম্মেলনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। জানা গেছে, গতকালের সিদ্ধান্তের আলোকে সদস্যদেশগুলোকে ওই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আলোকে সদস্য দেশগুলো তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও খাদ্য নিরাপত্তায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করবে।  কৃষি বিষয়ে ২০২০ সালের জলবায়ু সম্মেলনে একটি স্টকটেকিং-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে— ঝুঁকি ও বিপন্নতার মূল্যায়ন, আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঐতিহ্যগত ভিন্নতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষিতে নারী-পুরুষের ভূমিকা। এদিকে গত নয় দিনের আলোচনা শেষে গতকাল প্যারিস রোল বুক বা বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়া পাঁচটি ইস্যুর মধ্যে তিনটির বিষয়ে একটা ইনফরমাল নোট বের হয়েছে।

 যে তিনটি ইস্যুতে নোট বেরিয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক, গ্লোবাল স্টকটেক এবং কমপ্লায়েন্স মেকানিজম। এই তিনটি ইস্যুতে আগামী বছর পোল্যান্ডে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে।

প্যারিস রোল বুকের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন) নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এনডিসির রূপ কী রকম হবে অর্থাৎ এর ফিচার কী রকম হবে, ইনফরমেশন বা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয় এবং অ্যাকাউন্টিং বা ক্যালকুলেশন কেমন হবে মূলত এগুলোই থাকছে এনডিসিতে। এই বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখনো একমত হতে পারেনি। ফলে কোনো ট্যাক্স নোটবুকও বের হয়নি। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সূত্রে জানা গেছে, এই বিষয়ে আজ হয়তো একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সূত্র জানায়, প্যারিস চুক্তির আওতায় অভিযোজন তহবিল কাজ করবে কি না এ বিষয়েও আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আজকের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সর্বশেষ খবর