শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সব দলের সঙ্গেই পীর মিসবাহ শক্তিশালী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

সব দলের সঙ্গেই পীর মিসবাহ শক্তিশালী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী

সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) মহাজোট বা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি এককভাবে যেভাবেই হোক বর্তমান এমপি তরুণ নেতা অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহই হবেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে এগিয়ে থাকবেন তিনি। গত পৌনে চার বছরে তিনি নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে নিজের আবেদন তুলে ধরতে পেরেছেন। এ আসনটি জেলা সদরে হওয়ায় এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে নারাজ। বিএনপিসহ প্রধান তিন দলের প্রার্থীদের পদচারণায় এখন নির্বাচনী আমেজ চলছে জেলা শহরজুড়ে।

সুনামগঞ্জ সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর জাপা। প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ করছেন পীর মিসবাহ। দলীয় সমর্থনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইমেজকে তুলে ধরছেন ভোটারদের মাঝে। নির্বাচনী এলাকায় সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার যে চর্চা করেছেন মিসবাহ, সেই ইমেজকে পুঁজি করে তৈরি করছেন আগামীর নির্বাচনী মাঠ। কোনো কারণে জাপা জোটবদ্ধ নির্বাচনে না গেলে যাতে একক নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে পারেন। তার সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে— নিজের এবং পরিবারের কোনো সিন্ডিকেট নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন আইনজীবী, আরেকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট। নেই কোনো ক্যাডার বাহিনী। দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করলে পীর মিসবাই হবেন মহাজোটের প্রার্থী। আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন তিনি। ফলে যেভাবেই নির্বাচন হোক, তিনিই হবেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এই আসনে মহাজোটের বড় শরিক আওয়ামী লীগের তিন নেতা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। আসনটি নিজেদের দখলে এনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে চান তারা। এরা হলেন— জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাবেক এমপি আলহাজ মতিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার দুবারের মেয়র আয়ুব বখত জগলুল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। আগামীতে একক নির্বাচন হলে সদর আসনে এই তিন নেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার। তবে বিভিন্ন মেয়াদে জনপ্রতিনিধি থাকার কারণে জনসম্পৃক্ততার দিক থেকে মতিউর ও জগলুল ইমন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। আর এই দুই নেতার পক্ষে আছেন জেলার আরেক প্রভাবশালী নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট। প্রতিমন্ত্রী-এমপি বনাম স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি- এ দুই বলয়ে বিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগ। আর ব্যারিস্টার ইমন রয়েছেন প্রতিমন্ত্রী-এমপি বলয়ে, যাদের বিপরীতে একাট্টা মতিউর-মুকুট-জগলুল। প্রশাসনিকভাবে প্রতিমন্ত্রী-এমপি বলয় সুবিধায় থাকলেও জেলা সদরে রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থ্যের দিক থেকে অনেক এগিয়ে মতিউর-মুকুট-জগলুল বলয়। নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে এই গ্রুপের দুই মনোনয়ন দাবিদার শেষ পর্যন্ত যে কোনো আপস-মীমাংসায় চলে আসতে পারেন। এদিকে সদর আসনে বিএনপির মূল সম্ভাব্য প্রার্থী দুজন। তাদের মধ্যে সদর আসনে তিন মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক হুইপ অ্যাডভোকেট ফজলুল হক আছপিয়া। তার বিপরীতে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ চাইবেন সদর উপজেলার চারবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ দুই নেতা শেষ পর্যন্ত কেউ কাউকে একচুলও ছাড় দেবেন না। ফজলুল হক আছপিয়া বয়সজনিত কারণে যদি নির্বাচন থেকে দূরে থাকেন তবে জাকেরীনকে টেক্কা দিতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামতে পারেন আছপিয়ার শিষ্য জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল। এ ছাড়া এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল লতিফ জেপি। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক নির্বাচনে আসনটি নিজেদের কব্জায় নিতে বদ্ধপরিকর বিএনপি।

সর্বশেষ খবর