মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রসিক নির্বাচনে হার্ডলাইনে এরশাদ

বহিষ্কার হচ্ছেন আসিফ শাহরিয়ার

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলীয় কোন্দল মেটাতে হার্ডলাইনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী যেই হোক, তাকে দল থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তিনি।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করায় আপন ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের ওপর চরম ক্ষুব্ধ এরশাদ। সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এরশাদ নিজেই তাকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে শনিবার এই চিঠি দেন। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে ভাতিজাকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথাও জানিয়ে দেন। তা ছাড়া রসিক নির্বাচন নিয়ে কোন্দল সৃষ্টি করায় আবদুর রউফ মানিকের বিরুদ্ধেও বিবৃতি দেন জাপা চেয়ারম্যান। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী এইচ এম এরশাদের ভাইয়ের ছেলে হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাকে বহিষ্কার করা হবে। আমি আশাবাদী শেষ পর্যন্ত শাহরিয়ার পার্টির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়ে দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পক্ষে কাজ করবেন।’ তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদের বাড়ি রংপুরে। এ জেলা এরশাদের ঘাঁটি। রংপুরে এরশাদের উন্নয়নের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙ্গলের প্রার্থী। তিনি মানবদরদি, সৎ, নিষ্ঠাবান ও বেশ জনপ্রিয় নেতা। সুষ্ঠু ভোট হলে এরশাদের প্রার্থী হিসেবে মোস্তফার বিজয় নিশ্চিত। নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কোন্দল মেটাতে তত্পর এইচ এম এরশাদ। তিনি তার নিজের দুর্গ হিসেবে খ্যাত রংপুরের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে উদ্ধার করে জাতীয় পর্টির হাতে নিতে চান। এজন্য প্রয়োজনে তিনি তার নিকটাত্মীয়কেও দল থেকে বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি আরও কঠোর হবেন। দলের নীতিনির্ধারকরা এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। সূত্র জানায়, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব উদ্ধার করার আশা নিয়ে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। ইতিমধ্যে রংপুরে গিয়ে মোস্তফাকে তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু এরশাদের সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন তারই ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার। নিজেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হওয়ার যোগ্য দাবি করে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। এরশাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বরং তাকে চ্যালেঞ্জ করেই মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আসিফ। তাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে রংপুর জাতীয় পার্টি। একটি মোস্তফার, অন্যটি আসিফের। নির্বাচন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

 কোন্দল নিরসন ও একক প্রার্থী করা না গেলে শেষ পর্যন্ত বিজয় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সবকিছু চিন্তা করে এরশাদ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘রংপুরে আমাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জয়ের হিসাব-নিকাশ করেই তিনি এই মনোনয়ন দেন। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু পার্টি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কেউ প্রার্থিতা ঘোষণা করে দলে কোন্দল সৃষ্টি এবং আমাদের প্রার্থীর সুনিশ্চিত বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ জানা গেছে, নিজের দুর্গ রংপুরে কোন্দলের কারণে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়েছে। এবার সেই সুযোগ হেলায় হারাতে চান না এরশাদ। তাই নির্বাচনে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে তিনি। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে কাউকেই কোন্দল করতে দিতে নারাজ। তৃণমূলের মতামত ও স্থানীয় জনপ্রিয়তা যাচাই করে শুরুতেই একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বহিষ্কারের বার্তা দিয়ে শনিবার আসিফ শাহরিয়ারকে পাঠানো এরশাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে যে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশকারী আসিফ শাহরিয়ারকে পার্টির পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে যে, তিনি যদি পার্টি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রসিক নির্বাচনে প্রার্থী হন কিংবা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে না নেন— তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।’ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রংপুরের একসময়ের জাতীয় পার্টির নেতা আবদুর রউফ মানিকের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন এরশাদ। তাতে তিনি বলেন, ‘আবদুর রউফ মানিক যিনি কোথাও কোথাও নিজেকে জাতীয় পার্টির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন— তার সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে যে, তিনি এখন জাতীয় পার্টির একজন সাধারণ সদস্যও নন। তাই মানিকের কোনো বক্তব্যে বিভ্রান্ত হবেন না। সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রশ্নে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।’

সর্বশেষ খবর