বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডিসেম্বরেও চালু হচ্ছে না বাড্ডার ইউলুপ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডিসেম্বরেও চালু হচ্ছে না বাড্ডার ইউলুপ

বাড্ডায় ইউলুপের কাজ শেষ হয়নি। ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বছর ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী বছরের মার্চে গড়াচ্ছে বাড্ডার ইউলুপটির উদ্বোধন। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ালেও আলোর মুখ দেখছে না রাজউকের হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ এই ইউলুপটি। নভেম্বর মাস শেষের দিকে এসেও কাজ মাত্র ৭৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া।

এ বছরের শুরুতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছিলেন, জুনের মধ্যে এই ইউলুপ চালু করা যাবে। এখন জুন পার হয়ে ডিসেম্বরেও ইউলুপ নির্মাণ শেষ হবে না বলে জানান তারা। মূলত ইউলুপ ব্যবহার করা হয় গাড়ির লেন পরিবর্তনের জন্য। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে যানজট-প্রবণ এই এলাকার বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বাড্ডা ইউলুপটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থে ১০ মিটার। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বাড্ডা ইউলুপটির কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। গতকাল মেরুল বাড্ডার ইউলুপ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউলুপের দুই পাশের র‌্যাম্প নির্মাণ শেষের দিকে। মাঝের ইস্পাতের বক্সগুলো জোড়া লাগানো হয়েছে শুধু। সেখানে রড ফেলে রাখা হয়েছে। মাঝের মূল এই অংশটিতে এখনো ঢালাই শুরু হয়নি। বৃহৎ অংশের এই কাজ বাকি থাকায় এগোচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। দুই বছরেরও বেশি সময় নিয়ে কাজ শুরু হয়ে এতদিনে ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের এই ধীরগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। এই রুটে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে ইউলুপের নিচে পিলারের ফাঁক দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়। দুই পাশের গাড়ি এক লেনে চলতে গিয়ে বাঁধছে যানজট। সকাল এবং বিকালের দিকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এই জায়গাতে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় মানুষকে।

দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে আশপাশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশ কিছু জায়গা ঘিরে কাজ চলায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। দোকানে যাওয়া-আসার মতো রাস্তা পর্যন্ত নেই। ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, দুই বছর হলো দোকানে খরিদ্দার নেই। একবার মনে করি অন্য জায়গায় চলে যাব। বছরখানেক ধরে শুনছি ইউলুপ চালু হবে, কিন্তু চালু আর হয় না। আরেক বাসিন্দা ইমরুল কবির বলেন, বর্ষার সময় কাদা পানির সরোবর হয়ে যায় এই রাস্তা, আর গরমে ধুলায় শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়। প্রকল্প শুরু হওয়া থেকে আমরা এ কষ্ট ভোগ করছি। নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাড্ডার ইউলুপের কাজ ৭৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এ জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের মার্চে করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউলুপ যেখানে হচ্ছে সেখানে মূল সড়কের নিচে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশ কিছু পরিসেবা সংস্থার তার ছিল। সেগুলো সরাতে সময় বেশি লেগেছে। আর জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা বিলম্বের আরেকটি কারণ।  এ ব্যাপারে নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, এগুলো নির্মাণ করা তো রাজউকের কাজ নয়। সিটি করপোরেশনই যথেষ্ট। অথচ লাভের আশায় রাজউক এসব প্রকল্প হাতে নেয়, কিন্তু সময় পার হলেও শেষ করতে পারে না। দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ায় তারা।

সর্বশেষ খবর