বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইউজিসির প্রতিবেদন

মেডিকেলের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ

আকতারুজ্জামান

কেন্দ্রীয়ভাবে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু হয়নি। ফলে একটির পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় না ভর্তিচ্ছুরা। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে রাষ্ট্রপতি বারবার তাগিদ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা চালু করেনি। এবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৬) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধের বিশেষ নজরদারিরও কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদন শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির হাতে হস্তান্তর করা হবে।

সুপারিশে বলা হয়, সারা দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে মেডিকেলে ভর্তির

অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতি না থাকায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হন শিক্ষার্থীরা। তাদের কষ্ট লাঘবে অনেক আগ থেকেই গুচ্ছ পদ্ধতির কথা বলে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই ‘ভালো কথাটি কানে তুলছে না। ইউজিসি এবার তাদের প্রতিবেদনে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার অনুরূপ গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা বলেছে। এ ভর্তি পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়বে না। সূত্রমতে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষামন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া আর এগোতে পারেনি। এতে মত দেননি কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। কয়েক বছর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বর্ষে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সিলেটবাসীর আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, অনেকক্ষেত্রেই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরের দিন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে থাকে। একটি পরীক্ষা দিয়ে অন্য পরীক্ষার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একইদিন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। এতে বিপাকে পড়তে হয় ভর্তিচ্ছুদের। ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে আমাদের এত দুর্দশা পোহাতে হতো না। অভিভাবকরাও বলছেন, মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী সারা দেশের কলেজে ভর্তি হন। অথচ শিক্ষার্থীদের ঘুরে ঘুরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস কাটাতে হয় কেন?

শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র মতে, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরীক্ষার আয়ের যে অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়ার কথা সেটিও দেন না। এই মোটা অঙ্কের টাকা হাতছাড়া না করতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার পদ্ধতি মানতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রে একটি আসনের জন্য শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতায় টিকতে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ভর্তি হন। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে একটি আসনের জন্য প্রতিযোগীর সংখ্যা ৫/৬ জনে নেমে আসত। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে পুঁজি করে প্রতিবছর ৩২ কোটি টাকারও বেশি কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো হাতিয়ে নেয়। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা চালু না হওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছে কোচিং বাণিজ্যও।

সর্বশেষ খবর