বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডাক্তার-ডক্টর আওয়ামী লীগে বিএনপির প্রত্যাশী তিনজন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

ডাক্তার-ডক্টর আওয়ামী লীগে বিএনপির প্রত্যাশী তিনজন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা—৩ আসনে যেসব দল লড়তে চাইছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব বেশি। তবে কলহ-কোন্দলের দিক থেকে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। ওই ব্যাপারটি বিএনপিতে অত তীব্র ও প্রকাশ্য নয়। পরিস্থিতিদৃষ্টে অনুমান করা যায়, মনোনয়ন প্রশ্নে আওয়ামী লীগে চলছে ডাক্তার ও ডক্টরের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এরা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। ডক্টর আবু ইউসুফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর প্রফেসর, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেন্স অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার উপাচার্য। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এলাকায় জোর গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এতে করে এলাকায় হৈচৈ পড়ে গেছে। বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডাক্তার শহিদুল আলমও প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয়। ডা. আলম বিএনপি চেয়ারপারসনের অত্যন্ত আস্থাভাজন। তা সত্ত্বেও মনোনয়ন প্রশ্নে দলের ‘হ্যাঁ’ প্রত্যাশা করছেন। আশাশুনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া দলের সাতক্ষীরা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট বরুণ বিশ্বাসও মাঠে রয়েছেন। সাতক্ষীরায় মোট ৪টি নির্বাচনী আসন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাতক্ষীরা-৩। ভৌগোলিক দিক দিয়ে দেবহাটা উপজেলার ৫টি, আশাশুনি উপজেলার ১১টি ও কালিগঞ্জ উপজেলার (একাংশ) ৪টি ইউনিয়নের মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩। এখানে ভোটার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৩ জন। নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তবে তার বাড়ি নিজ নির্বাচনী এলাকা কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় চারদলীয় জোটের জামায়াত-বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী উপজেলা আশাশুনিতে বিপুল ভোট পাওয়ায় এমপি নির্বাচিত হন। তার সময়ে সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সরকার ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না দলীয় নেতা-কর্মীরা। যে কারণে ৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিরোধ চরম হওয়ায় বর্তমান সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়ন প্রচারের ক্ষেত্রে জনসম্মুখে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে সভাপতি পদে সাবেক এমপি ডা. মোকলেছুর রহমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের কাছে পরাজিত হলে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তারা। স্থানীয়দের মতে এ সময় বর্তমান এমপি ডা. আ ফ ম রুহুল হক পরাজিত প্রার্থী ডা. মোকলেছুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টুর পক্ষ নেন। পরবর্তীতে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ নিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম  মোস্তাকিমের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন দলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টু সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান ও ডা আ ফ ম রুহুল হক এমপি। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়। এ বিরোধ শুধু আশাশুনি উপজেলাতে নয়। রয়েছে রুহুল হকের নিজ বাড়ি কালিগঞ্জের নলতা ও দেবহাটা উপজেলাতেও। দেবহাটা উপজেলা চেয়াম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবদুল গনির সঙ্গে রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল হক অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহবুব আলম খোকনের দা-কুড়াল সম্পর্ক। গত কয়েক মাস আগে উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি নিয়ে দুজনের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয় এবং তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ভাইস চেয়ারম্যান খোকন বাদী হয়ে দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চেয়ারম্যান আবদুল গনির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চেয়ারম্যান ওসমান গনি আদালত থেকে জামিন পেলে দেবহাটার পারুলিয়ায় সংবর্ধনার আয়োজন করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ড। কিন্তু তাতে বাদ সাধেন ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকন। সংবর্ধনা পণ্ড করতে একই স্থানে একই সময়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে পাল্টা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফলে এ ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উপজেলা প্রশাসন। পণ্ড হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠান। ফলে উভয়ের মধ্যে বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। ডা. আ ফ ম রুহুল হক মনে করেন, পর পর দুই বার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে দেশের জন্য এমডিজি পুরস্কারসহ বেশ কিছু ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার বয়ে এনেছেন। দেশের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সক্রিয় করায় আজ মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডই মনোনয়ন নিশ্চিত করবে। ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ জানান, দলীয় মনোনয়ন বড় কথা নয়, এলাকার মানুষের পাশে থেকে সারাজীবন কাজ করতে চাই। আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করলে আমাকে মনোনয়ন দিবেন। মনোনয়ন পেয়ে আমি এমপি হতে পারলে সাতক্ষীরার যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করব। সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখব। এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের দুই বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এ বিএম মোস্তাকিম। আশাশুনিতে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। এলাকায় সভা-সমাবেশ করে ও পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে নাম শোনা যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক সাবেক এমপি মনসুর আহমেদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে। এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে প্রচারে নেমেছেন ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. শহিদুল আলম। এলাকার মানুষের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে একজন কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে তার রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তিনি সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের নানাভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন। এলাকার মানুষ আজও তার কথা স্মরণ রেখেছে। শুধু দলীয় নেতা-কর্মী নয় সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা। জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন এই আসনের সাবেক এমপি, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য অ্যাডভোকেট স. ম সালাউদ্দিন। এ আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে মুহাদ্দিস রবিউল বাসারের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর