সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সৌরবিদ্যুতের নতুন যাত্রা

যুক্ত হলো জাতীয় গ্রিডে

শফিক জামান, জামালপুর

সৌরবিদ্যুতের নতুন যাত্রা

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শিমলাবাজার এলাকায় আকাশের পানে তাকিয়ে থাকা সারি সারি সোলার প্যানেল আকণ্ঠ পান করছে সূর্যরশ্মি। সূর্য শক্তি। চকচকে সোলার প্যানেলের আহরিত  প্রাকৃতিক এই শক্তিধারা বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়ে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ একর জমিজুড়ে এই সোলার প্যানেলের বিস্তৃতি সরিষাবাড়ির মানুষের কাছে অনেকটাই বিস্ময়ের। ঘরে বিচ্ছিন্নভাবে একটি-দুটি সোলার এতদিন দেখেছেন তারা। কিন্তু এত বিশাল এলাকাজুড়ে চকচকে সোলারের সারি কখনো দেখেনি এই অঞ্চলের মানুষ। এই সোলার প্যানেল থেকে প্রতিদিন জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সরিষাবাড়ির সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ খাতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বেসরকারি খাতের এমন আরও পাঁচটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগামী এক বছরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে যাচ্ছে ৩৩২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ। শিমলাবাজারে এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করেছে এনগ্রিন সরিষাবাড়ি সোলার প্লান্ট লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরিষাবাড়িতে পিডিবির ৩৩/১১ কে. ভি. বিদ্যুৎ বিতরণ উপকেন্দ্রের লাগোয়া অব্যবহূত পড়ে থাকা আট একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়ে এই সোলার প্লান্টটি বাস্তবায়ন করে এনগ্রিন সোলার প্লান্ট লিমিটেড। পুরো আট একর জায়গাজুড়ে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেলের সারি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের নীতিমালার আলোকে এনগ্রিন লিমিটেড এই প্লান্টে বসানো সোলারের ফাঁকে ফাঁকে হাঁস, মুরগি, ছাগল পালন ও শাক-সবজি চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলতি বছর ১৫ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়। আর গত ৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত  এই কেন্দ্র থেকে সাড়ে ১২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ফার্নেস ওয়েল, পেট্রল, কয়লা অর্থাৎ জীবাশ্ম দিয়ে সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে কমপক্ষে ৫২০ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করত। এই বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে পরিবেশ রক্ষা করতে কমপক্ষে ৩৮৮ একর বনায়নের প্রয়োজন হতো। সরিষাবাড়ির সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এই বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে রক্ষা করছে পরিবেশকে। এনগ্রিন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল আলম জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে ১১ হাজার ৬১৬টি সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রকল্পটিতে জার্মানের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ২৮৫ ওয়াট পিকের হাই এফিসিয়েন্ট মনো-ক্রিস্টালাইন সোলার ব্যবহার করা হয়েছে। কেন্দ্রের মোট ইন্সট্রল ডিসি ক্যাপাসিটি ৩ দশমিক ৩ মেগাওয়াট পিক। যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনা হলেও প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে। এর ডিজাইন করেছেন বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী। সরকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০০৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। ব্যতিক্রমী এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরকারি এবং দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটির জন্য জমি দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর বিনিয়োগ করেছে বেসরকারি খাত। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জার্মানির আইএফই এরিকসন এজি, দেশীয় কোম্পানি কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর